দামপাড়ার ‘অপরিকল্পিত’ র্যাম্প ১৫০০০ শিক্ষার্থীর গলার কাঁটা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। যার ১৪টি র্যাম্পের একটি পড়েছে দামপাড়া এলাকায় মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের (বাওয়া) প্রধান ফটকের সামনে। বর্তমানে এই র্যাম্পের কাজের কারণে পুরো সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর চার লেনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পরিণত হয়েছে আড়াই লেনে। নিত্যদিন লেগে থাকছে অসহনীয় যানজট। এ ছাড়া বড় পিলার ও গর্তের কারণে স্কুলে যাতায়াত করা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়া করতে দুর্ভোগের শেষ নেই অভিভাবকদের।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতে হয় আরও দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বাগমনিরাম স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীকে। তবে একেবারে গেটের সামনে র্যাম্পের কাজ হওয়ায় বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাওয়া স্কুলের প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। ভোগান্তির বিষয়টি জানিয়ে র্যাম্প নির্মাণ থেকে সরে আসতে স্কুল কর্তৃপক্ষ সিডিএর কাছে চিঠিও দিয়েছে। এই র্যাম্প নির্মাণকে ‘অপরিকল্পিত’ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা। তার পরও আগের সিদ্ধান্তেই অনড় সিডিএ।
সরেজমিন দেখা যায়, বাওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকের সামনে র্যাম্পের জন্য বড় বড় গর্ত করা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় পিলার। নির্মাণকাজের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে ব্যস্ততম এই সড়কের বেশির ভাগ অংশ। বৃষ্টির কারণে গর্তে জমে থাকছে পানি। যে কারণে স্কুলে আসতে ও স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। নির্মাণকাজের কারণে কয়েকটি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ ড্রেনও খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বড় বড় গার্ডারসহ নানা নির্মাণসামগ্রী। র্যাম্পের জন্য সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান ঘেরাও করে বড় বড় গার্ডার দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচলে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
বাওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরিফ উল হাছান চৌধুরী বলেন, র্যাম্পের নির্মাণকাজের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াতে বেগ পেতে হচ্ছে। র্যাম্প নির্মাণ হলে এই সমস্যা ও যানজট স্থায়ী হবে। তাই র্যাম্প নির্মাণ না করতে আবেদন করেছি আমরা।
সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ববি বড়ুয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে আমরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে সমর্থন আছে আমাদের।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি, পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, যৌক্তিক পরিকল্পনা ছাড়া অনেকটা কর্মকর্তাদের ইচ্ছা অনুযায়ীই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। তাদের যখন ইচ্ছে হয়েছে গাছ কেটেছে; ব্যস্ততম রাস্তা নষ্ট করেছে। কোনো কাজ করার আগে স্টেকহোল্ডারদের মতামতও নেয়নি।
তবে সিডিএ বলছে ভিন্ন কথা। দামপাড়ার র্যাম্পটি হলে শিক্ষার্থীদের উপকারেই আসবে বলে দাবি করেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহাফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘র্যাম্পটি নির্মাণ হলে সহজে ও আরামে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাতায়াত করতে পারবে। এর পরও এটা নিয়ে তারা কেন অভিযোগ তুলছে আমি বুঝে উঠতে পারছি না। বাওয়া স্কুলের সামনে র্যাম্প নির্মাণের যাবতীয় কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। তাই সেখান থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।
২০১৭ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পায়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় কয়েক দফা সময় বাড়ে এটির। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়। তবে এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হলেও র্যাম্পের কাজ শেষ হতে আরও অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সিডিএ সূত্র।