মোঃ সাইফুল ইসলামঃ
দুই দিনের সফরে আজ বিকেলে ঢাকা আসছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। প্রায় দুই দশক পর কাতারের কোনো আমির বাংলাদেশ সফরে আসছেন। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ সফর তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে কাতার। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরিস্থিতিতে শেখ তামিমের ঢাকা সফরে আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার বিষয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমিরের সফরে এখন পর্যন্ত ১৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে হয়তো ১০টি সই হতে পারে। চূড়ান্ত হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে নতুন করে সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে, যা সাধারণত এ ধরনের শীর্ষ পর্যায়ের সফরে হয়ে থাকে।
জানা গেছে, সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হওয়া চুক্তির মধ্যে রয়েছে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বন্দিবিনিময়, দ্বৈত কর প্রত্যাহার ও শুল্ক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা। দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে সইয়ের তালিকায় থাকা এমওইউর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে কাতারে জনশক্তি রপ্তানি, ধর্মীয় বিষয়ে সহযোগিতা, বন্দর ব্যবস্থাপনায় কাতারের প্রতিষ্ঠান মাওয়ানির যুক্ততা, উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা ও কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণের বিষয়।ভারত ও থাইল্যান্ডের পর কাতারের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি সই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে ১০০ জনের বেশি বাংলাদেশি নানা অপরাধে দণ্ডিত হয়ে কারা ভোগ করছেন কাতারে। চুক্তি হলে দণ্ডিত ব্যক্তিরা কাতার থেকে ফেরার পর সাজার বাকি মেয়াদ দেশে ভোগ করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বন্দিবিনিময় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া রয়েছে। প্রতিনিয়ত কাতারের কারাগারে বন্দিদের বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করছে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস। চুক্তি হলে তা ঢাকার জন্য লাভজনক হবে। জানা গেছে, কাতারের বন্দর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান মাওয়ানি বাংলাদেশে বন্দর ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটি মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন বন্দরের ব্যবস্থাপনা করতে চায়। তবে বাংলাদেশ এখনই প্রতিষ্ঠানটিকে এ বন্দরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ সফরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একটি এমওইউ সই হবে।
গত বছরের মার্চে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। দেশটির আমিরের ঢাকা সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কাতারে কাজ করার কথা। এ মুহূর্তে কাতারের নৌবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এর আওতায় কোস্টগার্ডের সদস্যরা কাতারে কাজ করছেন।
২০১৭ সালে আরব লিগ, বিশেষ করে সৌদি আরবের ভূমিকায় মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল। ওই সময় কাতারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের ওপর সৌদি আরবের প্রবল চাপ ছিল। তখন বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। কারণ, বাংলাদেশের জনশক্তির প্রধান বাজার সৌদি আরব হলেও প্রচুরসংখ্যক কর্মী কাতারে কাজ করেন। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই সংকটে বাংলাদেশ কাতারের পাশে ছিল। তাই দেশটি বাংলাদেশের ওপর সন্তুষ্ট। এর আগে ২০০৫ সালে কাতারের তৎকালীন আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশে এসেছিলেন।