দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চট্টগ্রামের মুরাদপুর, আহত বেশ কয়েকজন

প্রকাশিত: ৫:১৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২৪

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালে থেমে থেমে ঘটে ককটেল বিস্ফোরণ। উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

আজ বিকেলে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ দুই পক্ষের মাঝখানে অবস্থান নিলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।

মঙ্গলবার বিকেল থেকে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। কিন্তু তার আগেই দুপুর ২টা থেকে সেখানে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফলে কোটাবিরোধীরা প্রায় এক কিলোমিটারের অদূরে মুরাদপুরে অবস্থান নেন। বিষয়টি জানার পর ষোলশহর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুরাদপুরের দিকে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। ছুঁড়তে থাকে ইটপাটকেল। চলে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ। পাওয়া যায় গুলির শব্দও। পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে দেখা যায়।

একপর্যায়ে দুইপক্ষের মাঝখানে অবস্থান নেন পুলিশ। কিন্তু কঠোর অবস্থান না নেওয়ায় পুলিশের এই বাধা উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটাবিরোধীদের দিকে তেড়ে গিয়ে ধাওয়া দেন। অপরদিক থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন কোটাবিরোধীরা। এভাবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা চলতে থাকে। তবে বিকেল ৪টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল।

এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে মাথায় হেলমেট পরা ছাই রঙের টি-শার্ট, কালো প্যান্ট ও কালো রঙের জুতা পরিহিত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে ভারি অস্ত্র হাতে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়। তবে এই ব্যক্তি পুলিশ সদস্য নাকি অন্য কোন পক্ষের তা তাৎক্ষনিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে অংশ নেন। মো. জাবের নামে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, যিনি গুলি ছুঁড়েছেন তিনি ছাত্রলীগকর্মী। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিবিরের ক্যাডাররা ঢুকে পড়েছে। অস্ত্র হাতে যাকে গুলি করতে দেখা গেছে তিনি শিবির ক্যাডার।

নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও কোটাবিরোধীদের সঙ্গে কয়েক দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এদিকে চবি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান বাহন শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সংঘর্ষ এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নির্দেশনাতেই শাটল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগর থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে কোনো ট্রেন ছেড়ে আসেনি।
ট্রেন বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে ষোলশহর রেলস্টেশন মাস্টার মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ট্রেন বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এ নির্দেশনাতেই ট্রেন বন্ধ রেখেছে রেল কর্তৃপক্ষ।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক অহিদুল আলম বলেন, ‘গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। ট্রেন চলাচলও বন্ধ ছিল। আজ ট্রেন চলাচল করলে সহিংসতা হতে পারে এমন আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সংঘর্ষ এড়াতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে আগামীকাল শাটল চলতে পারে।