‘দুর্নীতিবাজ-ঋণখেলাপি-ঘুষখোরদের আমরা বেশি সম্মান করি’
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেছেন, আমরা যারা দুর্নীতি করি, তারা বেশি বেশি কথা বলি, বিভিন্নজনকে উপদেশ দিই। এজন্য আমাদের কথা কেউ শোনে না। আবার দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও ঘুষখোরদেরকেই আমরা বেশি সম্মান করি। এতে তারা দুর্নীতি-অনিয়মে আরও উৎসাহ পায়। বিশ্বের অন্য কোথাও এমনটি নেই। জনগণকে এদেশের মালিকানা দেওয়া হয়েছে। তাই আপনারা যারা সাধারণ জনগণ, তারা দুর্নীতিবাজকে সরাসরি দুর্নীতিবাজ বলতে শিখুন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজারে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদক আয়োজিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রমুখ।
দুদক কমিশনার আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ ধনী এলাকা, এখানে প্রভাবশালীর সংখ্যা বেশি। আর প্রভাবশালীরাই বেশি দুর্নীতি করে। এখানে যারা অভিযোগ দিবেন তাদের যেন কোনো প্রকার হয়রানি করা না হয়। আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব দুদকের। প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে দুদকের জেলা কার্যালয় যেন অত্যন্ত কঠোর থাকে।
অন্যায্য অভিযোগ গ্রহণ করা হবে না জানিয়ে দুদক কমিশনার বলেন, অনেকেই এসে অভিযোগ করেন, আমার জমি অধিগ্রহণ করা হলেও সরকার আমাকে টাকা দিচ্ছে না। পরে খতিয়ে দেখা যায়, তার জমির খাজনা, খতিয়ান, নামজারি কিছুই ঠিক নেই। তাহলে অফিসার তাকে কীভাবে টাকা দিবেন! কেউ হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে অভিযোগ দায়ের করবেন না। কেউ অন্যায্য অভিযোগ দিলে দুদক সেটি গ্রহণ করবে না। দুদককে অনেকেই অনেক শক্তিশালী মনে করেন। কিন্তু আইনের নির্ধারিত গণ্ডির বাইরে দুদক যেতে পারবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আখতার হোসেন বলেন, আমাদের নিরলস প্রচেষ্টার পরেও দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে আনা যায়নি। কিন্তু আপনাদের সকলের সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই সফলকাম হবো।
পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ব্যক্তির দায় কখনোই প্রতিষ্ঠান নিবে না। একটি প্রতিষ্ঠানের ১-২ ভাগ লোক দুর্নীতিতে জড়িত থাকেন। আমি যদি দুর্নীতি না করি, তাহলে আমার অধস্তনেরা এটি অনুসরণ করবে। সমাজের প্রতি, আমার ডিপার্টমেন্টের কাছে আমি কতটা দায়িত্বশীল সেটা আমার চিন্তা করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে চলেছি। কিন্তু দুর্নীতিকে সমূলে উখাত করতে না পারলে আমরা সফল হবো না। তাই আমাদের দুর্নীতিকে না বলতে হবে।। আমাদের লক্ষ্য সমাজ থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা। সেবা নিতে গিয়ে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেটি আপনারা আমাদের জানালেই সমাধান সম্ভব। এজন্য সেবাগ্রহীতা ও দাতার মধ্যে বন্ধন তৈরি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক বলেন, দুর্নীতি এদেশে নতুন নয়। এটি অনেক পুরোনো। চানক্যের অর্থশাস্ত্রে দুই হাজার বছর আগে বলা হয়েছে, এই ভূখণ্ডে চল্লিশ প্রকারের দুর্নীতি হতে পারে। দুদকের আজকের আয়োজন সরকারি অফিসে সেবাপ্রার্থীরা কী ধরনের হয়রানি হচ্ছেন তা জানতে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ৫০ ভাগ সেবাও দিতে পারে তাও মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস পারে। তবে আমাদের কিছু সিস্টেমেটিক ত্রুটি আছে। আমার অফিসে প্রতিদিনই গণশুনানি হয়।। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেবাপ্রার্থীরা যান।
দুদককে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের জনগণের মধ্যেও সমস্যা আছে। জমির মালিক না হয়েও অনেকে ভুয়া কাগজপত্র করে জমির মালিক হয়ে যাচ্ছেন। এখানে সাধারণত বিভিন্ন জেলার মানুষ এসে জমি ক্রয় করেন। এদের অধিকাংশই সেই জমিটি বেশ কয়েক বছর খালি রাখেন। সেই খালি জমিটি তার অনুপস্থিতিতে দখল হয়ে যাচ্ছে। এরকম অনেক জমি, টাকা উদ্ধারের কাজ প্রতিনিয়ত আমার করতে হচ্ছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন নিশ্চিন্তকরণসহ বহু কাজ আমাদের করে যেতে হবে। দুদকের এই গণশুনানি চমৎকার একটি আয়োজন। দুদককে ধন্যবাদ জানাই নারায়ণগঞ্জ জেলায় এমন আয়োজনের জন্য। আমরা চাই যেন কোনো দুর্নীতি, ঘুষ না থাকে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), তিতাস গ্যাস, ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল, ভূমি অফিস, খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালসহ আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আসা সর্বমোট ৫৫টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়। সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেবাদাতারা সরাসরি উত্তর দেন। গণশুনানিতে মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক।