নকলের বিরুদ্ধে সর্বস্তরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে : রাষ্ট্রপতি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বন করাকে লজ্জাজনক বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচারণা চালানোর আহবান জানিয়েছেন।
তিনি আজ এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসাবে ভাষণ প্রদানকালে এ আহবান জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সকল পযার্য়ে পরীক্ষায় অসাধু উপায়ের বিরুদ্ধে সবার্ত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮,২৮৪ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সনদ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া আরো ১১ জন এমফিল এবং ৬ জন পিএইচডি সনদ লাভ করেন।
রাষ্ট্রপতি পরীক্ষায় এ ধরনের অসাধু উপায় অবলম্বনের বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমার লজ্জা হয় যখন শুনি, পরীক্ষার হলে শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদেরকে নকল সরবারহ করেন এবং বাবা-মায়েরা পর্যন্ত পরীক্ষার হলে উত্তর পত্র সরবরাহ করেন।
তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা বাস্তবিকই দুর্ভাগ্যজনক, কলংকজনক ও হতাশাজনক। তিনি এই অভিশাপ প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে বিশেষ করে শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, পরীক্ষায় এ ধরনের অসাধু উপায় অবলম্বনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আমি কি বলতে চাচ্ছি, শিক্ষার্থীদের তা উপলব্ধি করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আমি আমার জীবনে পরীক্ষায় কয়েকবার ফেল করেছি। কিন্তু কখনো পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বন করিনি। এমনকি পরীক্ষার হলে প্রশ্নের উত্তর কি হবে, এ বিষয়ে কখনো কারো কাছে জানতে চাইনি। এ জন্য আমি নিজে গর্ববোধ করি।
নগরীর পুরানো ঢাকায় ধূপখোলা খেলার মাঠে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসাবে বিশিষ্ট পদার্থবিদ অধ্যাপক ইমেরিটাস ড. অরুন কুমার বসাক বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, জবি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে কয়েকজন সংসদ সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি পেশার মযার্দা বিবেচনায় রেখে যে কোন ধরনের অনৈতিক চর্চা পরিহার করে তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তাদের সততা, নিষ্ঠা ও পারদর্শিতা প্রমাণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাকে ভাবতে হবে, আপনি যদি কোন অনিয়মের প্রশ্রয় দেন অথবা কোন দুর্নীতিতে জড়ান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি কি হবে।
রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স পরিচালনায় শিক্ষকদের আগ্রহ প্রবণতায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এতে তাদের নিজ নিজ বিভাগে তাদের নিয়মিত দায়িত্ব পালন ব্যাহত হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য নির্বাহী হিসাবে উপাচার্যগণকে অবশ্যই এ ধরনের কর্মকান্ড বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি উপাচার্যগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদেরকে অবশ্যই আপনাদের প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি সাবির্ক শিক্ষা কর্মকান্ড মনিটর করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু বিশেষ করে ট্রাফিক আইন লংঘনের প্রবণতার প্রতি শিক্ষার্থী এবং নতুন গ্রাজুয়েটদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আইন মেনে চলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের সক্রিয় ভূমিকা কামনা করেন।
তিনি বলেন, ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে, অথচ কেউ এটি ব্যবহার করে না, তিনি এ ব্যাপারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানান।
রাষ্ট্রপতি স্যাটেলাইট সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালী সংস্কৃতি রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ বিষয়ে একটি দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্যাটেলাইট সংস্কৃতির প্রভাব সত্ত্বেও বাঙ্গালী সংস্কৃতির ঐতিহ্য বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে হবে। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও চেতনা সমুন্নত রাখতে গ্রাজুয়েটদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, একজন সুনাগরিক হতে হলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার কোন বিকল্প নেই। এটি সমাজে সমতা, মানবতা ও ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপতি ডিগ্রি অর্জনের জন্য গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানান এবং মিথ্যা ও অন্যায়ের পক্ষাবলম্বন না করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ আগামীদিনে তোমাদের সৃজনশৃলতা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে সমৃদ্ধ ও উন্নত হবে’। রাষ্ট্রপতি আরো আশা প্রকাশ করেন যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তারা দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
১৫০ বছরের পুরানো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৮৬৩ সালে প্রথমে ব্রাহ্ম স্কুল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পরবর্তীতে জগন্নাথ কলেজ এবং ২০০৫ সালে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।