জেলা প্রতিনিধি,নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জের সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় চলাচলরত ব্যাটারিচালিত রিকশা, মিশুক ও ইজিবাইক থেকে বিপুল অঙ্কের চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। এক শ্রেণির অসাধু ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও কিছু নামধারী সাংবাদিকের সিন্ডিকেট এসব ব্যাটারিচালিত যান থেকে স্টিকার, কার্ড কিংবা চাবির রিং দিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা।
দিনের পর দিন সকলের চোখের সামনে চলে আসা এই চাঁদাবাজি রোধ করতে কোনো মহলই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। মহানগরীর অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা, মিশুক ও ইজিবাইকে সয়লাব। এসব ব্যাটারিচালিত যান শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে চলাচল নিষেধ থাকায় এই সুযোগ গ্রহণ করছে কিছু অসৎ ট্রাফিক পুলিশ ও কিছু নামধারী সাংবাদিক। তারা এসব ব্যাটারিচালিত যানে তাদের নির্দিষ্ট স্টিকার কিংবা চাবির রিং দিয়ে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করে। যারা এই স্টিকার পায় তাদের শহরে ঢুকলেও কেউ আটকায় না। আর আটকালেও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক আর ট্রাফিক পুলিশ মিলে সেটা মীমাংসা করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু সড়ক, খানপুর হাসপাতাল ও জামতলা ঈদগাহ পর্যন্ত সড়কে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। এরপর থেকে অনেকটা লুকিয়ে শহরে প্রবেশ করতে থাকে । ২০১৯ সাল থেকে শহরে ইজিবাইক প্রবেশ করলে তা আটক করে রেকার বিল বাবদ ১ হাজার ৫০০ করে টাকা আদায় শুরু করে ট্রাফিক পুলিশ। এতে চালকরা অনেকটা অস্বস্তিতে পড়েন। ২০২১ সালে ট্রাফিক পুলিশের অসাধু সদস্যরা ১ হাজার ৫০০ টাকা মাসিক চুক্তিতে বিশেষ এক কার্ড ও চাবির রিং বিতরণ করেন। এই কার্ড বা চাবির রিং চালকদের কাছে থাকলে তা আটক করতেন না ট্রাফিক পুলিশ।
পরবর্তী সময়ে ট্রাফিক পুলিশের অসাধু সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেন কতিপয় নামধারী সাংবাদিক। তাদের সমন্বয়ে গড়ে উঠে শক্তিশালী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। বর্তমানে সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার ব্যাটারিচালিত যান নিয়মিত চলাচল করছে। প্রতি গাড়ি থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, যা মাসে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়ক, দুই নম্বর রেলগেট, চাষাঢ়া চত্বর জুড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে ইজিবাইকের কারণে। গ্রিন সুপার মার্কেট, সোনার বাংলা মার্কেটের সামনের বঙ্গবন্ধু সড়কে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইজিবাইক স্ট্যান্ড। সড়কের মাঝ থেকেই ওঠানো হচ্ছে যাত্রী।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নগরীতে অবৈধ ইজিবাইকের কারণে যানজট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি কতিপয় অনলাইন ও পত্রিকার স্টিকার ব্যবহার করে ইজিবাইক চলাচলের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। এ নিয়ে সাংবাদিক নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে রহস্যজনক কারণে অনেকটা নিশ্চুপ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ।