নির্বাচনের প্রতিই আস্থা নষ্ট করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প!

প্রকাশিত: ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট:

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ঈশ্বর নিজে ভোটের ফলাফল গণনা করলে তিনি ভূমিধস জয় পেতেন। তিনি আরও বলেছেন, আগামী মঙ্গলবারের নির্বাচনে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ হলে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের মতো ডেমোক্রেটিক দুর্গেও নাকি বিজয়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতেন।

ট্রাম্পের এ মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, তাঁর মিথ্যা নির্বাচনী জালিয়াতির দাবি কীভাবে অযৌক্তিক মাত্রায় পৌঁছেছে। তবে এটা নতুন কিছু নয়। চার বছর আগেও তিনি দাবি করেছিলেন, ভোট কারচুপির কারণে তিনি পরাজিত হয়েছেন। এর পর তিনি দেশটির রাজধানীতে দাঙ্গা বাধিয়ে ছাড়েন।
সিএনএন বলছে, এবারের নির্বাচনেও তিনি ভয়ংকর হুমকি তৈরি করছেন। তিনি ভোটের ওপর তাঁর সমর্থকদের ভগ্ন বিশ্বাসের উত্তরাধিকার রেখে যেতে চাচ্ছেন, যাতে তিনি রাজনীতির মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার অনেক পর অন্যরাও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কলঙ্কিত করতে পারে। ট্রাম্প ২০২০ সালে জো বাইডেনের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে যাওয়ার অপমান থেকে নিজেকে বাঁচাতে জালিয়াতির অভিযোগ করেছিলেন। এবার তার মাত্রা আরও শানিত করেছেন।

আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার সমাপনী ভাষণ দেওয়ার পর ট্রাম্প এখন ক্রমবর্ধমানভাবে নির্বাচনের ওপর জনগণের আস্থাকে বিষিয়ে তোলার দিকে ঝুঁকছেন। বৃহস্পতিবার নিউ মেক্সিকোতে তিনি গত দুটি নির্বাচন নিয়ে মিথ্যা দাবি করেন এবং বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা দুবারই জিতেছি। যদি আমরা ঈশ্বরকে স্বর্গ থেকে নামিয়ে আনতে পারি এবং তিনি ভোট গণনা করতেন, তবে আমরা জিততাম। আমরা ক্যালিফোর্নিয়ায় জিততাম, আমরা অনেক রাজ্যে জিততাম। আপনাকে শুধু ভোট (ভোট প্রক্রিয়া) সৎ রাখতে হবে।’
বাস্তবে ট্রাম্প নিউ মেক্সিকোতেই দু’বার হেরেছেন ৮ এবং ১১ পয়েন্টে। উল্টো তাঁর দাবি, তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ডেমোক্র্যাট দুর্গে জয়লাভ করতে পারবেন। এখানে ভোটে কারচুপির দাবি ভিত্তিহীন। তবে তিনি সুস্পষ্ট এবং সুচিন্তিত কৌশলের অংশ হিসেবে এমন একটি ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করছেন, আগামী মঙ্গলবারের নির্বাচনে কারচুপি হবে। যাতে ট্রাম্প হেরে গেলে এটি আইনি চ্যালেঞ্জের ভিত্তি তৈরি করতে পারে এবং এটি তাঁর সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে।
ট্রাম্পের মিথ্যা কারচুপির দাবির সঙ্গে রক্ষণশীল মিডিয়াও এক সুর হয়ে এমন একটি ধারণা তৈরি করার জন্য কাজ করছে, তাঁর বিজয় নিশ্চিত। কারচুপি ছাড়া ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং ডেমোক্র্যাটদের জয় সম্ভব নয়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে চুরমার করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি চান, হেরে গেলে আপাত পরিকল্পনা হিসেবে তাঁর কর্মীদের দ্বারা আদালতে কমলার যে কোনো বিজয়কে দুর্বল করতে।
উদাহরণস্বরূপ, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি তদন্তে দেখা গেছে, ট্রাম্পের যেসব কর্মী ২০২০ সালে বাইডেনের বিজয়কে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তারা আবারও ধাপে ধাপে পরিকল্পনা তৈরি করছেন। ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির কর্মকর্তারা পেনসিলভানিয়ায় মেইল ব্যালটের সমস্যা সম্পর্কে ক্রমবর্ধমানভাবে দাবি তুলেছেন।
এবারের নির্বাচনের ন্যায্যতা নিয়ে ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া একটি পরাবাস্তব নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্র এবং দীর্ঘদিন ধরে ভোটের ক্ষেত্রে স্বর্ণমান বজায় রেখে চলেছে।

তবে নির্বাচনী মৌসুমে দু’দলের মধ্যে ব্যাপক মামলা-মোকদ্দমা অস্বাভাবিক নয়। যেমন, ২০০০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর এবং টেক্সাসের গভর্নর জর্জ ডব্লিউ বুশের মধ্যে ফ্লোরিডার ফলাফল নিয়ে কয়েক সপ্তাহ তিক্ত আইনি লড়াই চলে। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে দেশটির ৪৩তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকটের সমাধা হয়। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর ফলাফল মেনে নেন। এর ফলে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর নিশ্চিত হয়। তবে ট্রাম্প চার বছর আগে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন।

ট্রাম্প যেমন ভোটের ফলাফল নিয়ে সংশয় তৈরি করেছেন, তেমনি তাঁকে নিয়েও দেশটির ভোটারদের বড় অংশ সন্দিহান। গত সপ্তাহে সিএনএনের নতুন জরিপে দেখা যায়, নিবন্ধিত ভোটারদের মাত্র ৩০ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন এবং হারলে পরাজয় স্বীকার করবেন। অন্যদিকে, ৭৩ শতাংশ ভোটার বলেছেন, কমলা নির্বাচনে পরাজিত হলে তা মেনে নেবেন।
আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর ট্রাম্প অনাস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও তা সফল হচ্ছে না। ইতোমধ্যে ৬ কোটির বেশি আমেরিকান ভোট দিয়েছেন, যা মোট ভোটারের প্রায় ২৫ শতাংশ।
ট্রাম্পের ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এবং ভিত্তিহীন দাবি সুপ্রিম কোর্টসহ সব স্তরের একাধিক আদালত বাতিল করে দিয়েছেন।

ট্রাম্পের দলের বেশির ভাগ নেতা ভোটে কারচুপির তথ্য প্রচার করে বেড়ালেও কেউ কেউ ব্যতিক্রম। জর্জিয়ায় ২০২০ সালে নির্বাচনে ট্রাম্প কারচুপির দাবি করলে এর স্পষ্ট নিন্দা জানিয়ে গণতন্ত্রের নায়ক হয়ে ওঠেন রাজ্যটির রিপাবলিকান দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা গ্যাব্রিয়েল স্টার্লিং। তিনি এবারও সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘৫ নভেম্বর আমরা সারাদেশে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ নির্বাচন করতে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেওয়া শিখতে হবে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন গণমাধ্যম হাফপোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল পর্যন্ত দেশটির ৩১৭টি জরিপের গড় ফলে দেখা গেছে, কমলা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর সমর্থন ৪৮.১ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৭.৭ শতাংশ।