নির্মাণকাজে ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজন সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
বায়ুদূষণ কমাতে সরকারি নির্মাণকাজে ব্লকের ব্যবহার বাড়ালে দেশের কৃষিজমি বাঁচবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এটি টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। তবে এজন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
সভায় বায়ুদূষণ কমানো ও কৃষিজমি সংরক্ষণে ব্লকের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় ম্যাক্স গ্রুপ ও বাংলাদেশ (অঅঈ ইষড়পশ) এ.এ.সি ব্লক এন্ড প্যানেল ম্যানুফ্যাকচারস এসোসিয়েশনের পক্ষে, ম্যাক্সক্রিট লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর এবং ইকো- ফ্রেন্ডলি গ্রীন ব্রিকস লিমিটেডের শাহরিয়ার সাজ্জাদ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্লকের ব্যবহার শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, এটি নির্মাণ খাতের দক্ষতা ও স্থায়িত্বও বাড়ায়। আমরা সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই উদ্যোগ পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সাথে সমন্বয় করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সভায় ব্লক উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন নীতি সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়। ব্লককে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা, কাস্টমস ও ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে আনা এবং ব্লক উৎপাদনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এছাড়া, উন্নয়ন প্রকল্পে ব্লকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে এলজিইডি, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার রেট সিডিউল হালনাগাদ করার বিষয়ে মতামত উঠে আসে।
সব ধরনের ব্লকের গুণগত মান বজায় রাখতে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এইচবিআরআই) এবং বিএসটিআই-এর সহযোগিতায় জাতীয় মানমাত্রা নির্ধারণের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধি, নির্মাণ খাতের বিশেষজ্ঞ এবং ব্লক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ শাখার উপসচিব সিদ্ধার্থ শংকর কুণ্ডু।
প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস গত ২৫/৩০ বছর ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার (৩-তবৎড়) থ্রি জিরো একটি কার্বন নিঃসরণের দিকে আমাদের দ্রুত এগিয়ে যেতে হলে (অঅঈ ইষড়পশ) এ এ সি ব্লক-ই সমাধান। কারণ একটি (অঅঈ ইষড়পশ) এ এ সি ব্লক যে প্রডাকশন দেয়, ১৫ থেকে ২০টি হোলো ব্লক সেই একই প্রডাকশন দেয়। ইতোমধ্যে ম্যাক্সক্রিট দেশে (অঅঈ ইষড়পশ) এ.এ.সি ব্লকে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। মানিকগঞ্জে দেশের সর্ববৃহৎ (অঅঈ ইষড়পশ) এ. এ. সি ব্লক নির্মাণ কারখানা স্থাপন করেছে ম্যাক্স গ্রুপ। প্রকৌশলী আলমগীর বলেন, কার্বন নিঃসরণে সরকার যদি যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে (অঅঈ ইষড়পশ) এ এ সি ব্লক উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, একটি ব্লক কারখানা করতে ২৫ লাখ টাকায়ও করা যায়। আবার ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা দিয়েও করা যায়। সেটার স্পেসিফিকেশন ভিন্ন। কার্বন ইমিশনের টার্গেটও সেটা বিভিন্ন মাত্রার। এগুলোর শ্রেণীকরণ করতে হবে। বিভিন্ন গ্রেডের এবং বিভিন্ন স্পেসিফিকেশন রেট শিডিউল পিডব্লিইউডি’র শিডিউলে উল্লেখ্য করতে হবে। সেই রেট থেকে যেই যেই রিসপেক্টিভ ডিপার্টমেন্ট অ্যাম্প্লেয়াররা যখন টেন্ডার করবেন তখন কোন ব্রিকস তারা লাগাতে চান সেটা তারা ওই ব্রিকসের রেট অনুযায়ী টেন্ডারে উল্লেখ্য করে দিলেই ঠিকাদার সেটা লাগাতে বাধ্য হবেন।
ইকো- ফ্রেন্ডলি গ্রিন ব্রিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তিলোত্তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, যেহেতু এটা একটা বড় উদ্যোগ, রাতারাতি এটা করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে (অঅঈ ইষড়পশ) এ এ সি ব্লক ও অন্য ব্লক দিয়ে করার প্রক্রিয়া হাতে নিলে ভালো হবে।
বিনিয়োগকারীরা জানান, বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরে এ এ সি ব্লকের যে রেট ধরা হয়েছে সেটা আমাদের উৎপাদন খরচের চাইতেও অনেক নীচে। গণপূর্ত অধিদপ্তর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ আলোচনা ছাড়াই এককভাবে এই রেট দিয়েছে। যে কারণে আমরা সরকারি বিল্ডিংয়ে (অঅঈ ইষড়পশ) এ এ সি ব্লক ব্যবহার করতে পারি না। আমাদের উৎপাদিত ব্লক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই বেশি নেয়।
ইতোমধ্যে দেশে ৫/৭টি (অঅঈ ইষড়পশ) এ এ সি ব্লক কোম্পানি গঠিত হয়েছে। যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে রেট শিডিউল অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আরও ১০-২০টি ব্লক ব্রিকস ইন্ডাস্টিজ গড়ে উঠবে। তবে বিনিয়োগকারীরা এ জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, ঋণ সুবিধা, শুল্ক মুক্ত সুবিধা চেয়েছেন।