
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনায় আট শহীদের বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয় না। অথচ বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা যখন সেনা অফিসারদের বুকে এসএমজি তাক করে গুলি চালাতে উদ্যত হয়, তখন বাধা দিয়েছিল আট বিডিআর জওয়ান। বিদ্রোহীদের গুলি তাদেরই সহকর্মীদের বুক ভেদ করে, একে একে শহীদ হন আটজন। তারা হলেন- সেন্ট্রাল সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম, এডি খন্দকার আব্দুল আউয়াল, ডিএডি মোঃ মাসুম খান, ডিএডি মোঃ ফসিউদ্দিন, সুবেদার সহকারী মোঃ আবুল কাশেম, নায়েক সহকারী বসির উদ্দিন, ল্যান্স নায়েক মোঃ মানিক মিয়া ও সিপাহী মোঃ রুহুল আমিন।
বিডিআরের এই আট সদস্য সেদিন দরবার হলে বুক পেতে দিয়েছিল বিদ্রোহ দমন করতে। এদের মধ্যে সেন্ট্রাল সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সাহসিকতার জন্য তাকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদকে ভূষিত করা হয়েছে। তবে বাকি সাত জনের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি এখনও দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে কথা হয় সুবেদার মেজর শহীদ নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নানের সঙ্গে। ইত্তেফাককে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এই শহীদ পুত্র বলেন, সেদিন আমার পরীক্ষা ছিল। সেদিন আমার বাবা বাসা থেকে দেরি হয়ে যাবে বলে না খেয়ে দরবারে চলে যান। ওই যাওয়াই শেষ। সাত দিন পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে বাবার মৃতদেহ গ্রহণ করি। এই সাত দিনে এমন কোন হসপিটাল নেই বা যে যেখানে বলেছে সেখানেই আমরা বাবাকে খুঁজেছি, কেউই বলেনি বাবাকেও মেরে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, দরবার হলে বিডিআর জওয়ানেরা হত্যাকাণ্ড শুরু করার পর অনেকে যেখানে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিলেন, সেখানে আমার বাবা এগিয়ে যান সশস্ত্র জওয়ানদের প্রতিরোধ করতে। বাধা দেওয়ায় হত্যাকারীরা প্রথমে মশারির লোহার ষ্ট্যান্ড দিয়ে পিটিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। এরপর একজন সৈনিক বাবার বুকে এসএমজি ঠেকিয়ে ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আমার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ২০০১ সালের ১৫ ও ১৬ এপ্রিল সিলেটের পাদুয়া সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে যে যুদ্ধ হয়েছিল, সেই পাদুয়া ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন আমার বাবা নুরুল ইসলাম। ভারতের সঙ্গে সেই যুদ্ধে আমরা জয়ী হই।
আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাবাকে হত্যার ছয় মাস পর একমাত্র বিডিআর সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিজিবির সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদকে ভূষিত করে। অন্যদিকে, নিহত বাকি সাত বিডিআর সদস্যকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।