নেতা, জননেতা ও জনরাজনীতি

প্রকাশিত: ১২:০১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২৫


নিজেস্ব প্রতিবেদক:

প্লেটো তার ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে বলেছেন, জননেতা বা শাসক হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তির মধ্যে দার্শনিক রাজা হওয়ার গুণ থাকা প্রয়োজন। তার মতে, জননেতা হওয়ার জন্য জ্ঞান, নৈতিকতা ও ন্যায়বোধ অপরিহার্য। তিনি জননেতাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখেছেন, যিনি সমাজের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করেন।

জননেতা এমন একজন ব্যক্তি, যিনি জনগণের স্বার্থ রক্ষা ও উন্নতির জন্য কাজ করেন এবং তাদের আস্থা অর্জন করে সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখেন। তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, বরং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি জনগণের সমস্যা, চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষাকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ে তুলে ধরেন এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে কাজ করেন। জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রেখে তাদের কথা শোনেন এবং দুঃখ-দুর্দশায় পাশে থাকেন। তিনি সমাজের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করেন। আব্রাহাম লিংকন যেমনটি বলেছেন, ‘জননেতা হচ্ছেন জনগণের প্রতিনিধি, যিনি তাদের কল্যাণে কাজ করেন।’

দলীয় নেতা তখনই ‘জননেতা’ হয়ে ওঠেন, যখন তিনি দলীয় স্বার্থের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র জনগণের আস্থা, সমর্থন ও স্বীকৃতি অর্জন করেন। জননেতা হতে হলে তাকে জনগণের প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে আন্তরিকভাবে সমাধানে কাজ করতে হয়, যাতে সাধারণ মানুষ তার নেতৃত্বে নিজেদের স্বার্থের প্রতিফলন দেখতে পায়। তিনি কেবল নিজ দলের জন্য নয়, বরং সব শ্রেণি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য কাজ করেন এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেন। চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিকতা ও আদর্শিক অবস্থান ধরে রেখে তিনি জনগণের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। একই সঙ্গে তিনি শুধু তাত্ক্ষণিক সমস্যার সমাধানই করেন না, বরং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

জননেতা না থাকলে জনগণের স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষা হয় না, যা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে তোলে। জননেতা জনগণের কণ্ঠস্বর এবং তার অনুপস্থিতিতে জনগণের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয় না, ফলে গণতন্ত্রে অংশগ্রহণ কমে যায়। সরকার ও প্রশাসন স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাব বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সমাজে অসমতা ও বৈষম্য আরো বাড়ে। জননেতার অভাবে জনগণের মধ্যে হতাশা ও অনাস্থা সৃষ্টি হয় এবং গণতন্ত্রের কাঠামো কেবল নামমাত্র হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক দুর্বল হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো দলীয়করণ, গোষ্ঠীস্বার্থ এবং নেতৃত্বের সংকট। দলগুলো সাধারণত তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকে, ফলে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ কম থাকে এবং তাদের প্রকৃত সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো বেশির ভাগ সময় শক্তি প্রদর্শনের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করলেও জনগণের সঙ্গে প্রকৃত সংযোগ স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। এর ফলে জনগণের মধ্যে হতাশা, অনাস্থা এবং গণতন্ত্রের দুর্বলতা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা, জনগণের সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেওয়া এবং যুবসমাজ ও নারীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বাড়ানো।

মনে রাখতে হবে, যখন রাজনৈতিক দলগুলো স্বার্থের রাজনীতি করে, তখন জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয় এবং গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে, যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এই সমস্যার সমাধানে, দলীয় নেতাদের উচিত জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে তোলা এবং তাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক মনোভাব পোষণ করা। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করা এবং নৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থাত্, গণতন্ত্রের সফলতা ও কার্যকারিতার জন্য জননেতা অপরিহার্য। ‘জনরাজনীতি’ মূলত জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের সমস্যাগুলোর সমাধান এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। জনরাজনীতিতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ন্যায়বিচার এবং সর্বোচ্চ মানের সরকারি সেবা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা থাকে। প্রসঙ্গত, আমরা তারেক রহমানের এক সাম্প্রতিক বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি দিতে পারি; তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতি যদি জনগণের সেবা করতে না পারে, তবে সেই রাজনীতি অকার্যকর। এটাই রাজনীতির আসল শিক্ষা।’ এটা যেন দার্শনিক জাঁ জ্যাক রুশোর কথারই প্রতিধ্বনি! ‘সামাজিক চুক্তি’ তত্ত্বে রুশো বলেছেন, গণতন্ত্র এবং জনগণের স্বশাসনই সত্যিকারের রাজনীতি। জনগণ একত্রিত হয়ে সাধারণ ইচ্ছার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সমাজে সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।নেতা, জননেতা ও জনরাজনীতি

প্লেটো তার ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে বলেছেন, জননেতা বা শাসক হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তির মধ্যে দার্শনিক রাজা হওয়ার গুণ থাকা প্রয়োজন। তার মতে, জননেতা হওয়ার জন্য জ্ঞান, নৈতিকতা ও ন্যায়বোধ অপরিহার্য। তিনি জননেতাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখেছেন, যিনি সমাজের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করেন।

জননেতা এমন একজন ব্যক্তি, যিনি জনগণের স্বার্থ রক্ষা ও উন্নতির জন্য কাজ করেন এবং তাদের আস্থা অর্জন করে সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখেন। তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, বরং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি জনগণের সমস্যা, চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষাকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ে তুলে ধরেন এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে কাজ করেন। জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রেখে তাদের কথা শোনেন এবং দুঃখ-দুর্দশায় পাশে থাকেন। তিনি সমাজের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করেন। আব্রাহাম লিংকন যেমনটি বলেছেন, ‘জননেতা হচ্ছেন জনগণের প্রতিনিধি, যিনি তাদের কল্যাণে কাজ করেন।’

দলীয় নেতা তখনই ‘জননেতা’ হয়ে ওঠেন, যখন তিনি দলীয় স্বার্থের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র জনগণের আস্থা, সমর্থন ও স্বীকৃতি অর্জন করেন। জননেতা হতে হলে তাকে জনগণের প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে আন্তরিকভাবে সমাধানে কাজ করতে হয়, যাতে সাধারণ মানুষ তার নেতৃত্বে নিজেদের স্বার্থের প্রতিফলন দেখতে পায়। তিনি কেবল নিজ দলের জন্য নয়, বরং সব শ্রেণি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য কাজ করেন এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেন। চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিকতা ও আদর্শিক অবস্থান ধরে রেখে তিনি জনগণের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। একই সঙ্গে তিনি শুধু তাত্ক্ষণিক সমস্যার সমাধানই করেন না, বরং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

জননেতা না থাকলে জনগণের স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষা হয় না, যা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে তোলে। জননেতা জনগণের কণ্ঠস্বর এবং তার অনুপস্থিতিতে জনগণের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয় না, ফলে গণতন্ত্রে অংশগ্রহণ কমে যায়। সরকার ও প্রশাসন স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাব বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সমাজে অসমতা ও বৈষম্য আরো বাড়ে। জননেতার অভাবে জনগণের মধ্যে হতাশা ও অনাস্থা সৃষ্টি হয় এবং গণতন্ত্রের কাঠামো কেবল নামমাত্র হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক দুর্বল হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো দলীয়করণ, গোষ্ঠীস্বার্থ এবং নেতৃত্বের সংকট। দলগুলো সাধারণত তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকে, ফলে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ কম থাকে এবং তাদের প্রকৃত সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো বেশির ভাগ সময় শক্তি প্রদর্শনের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করলেও জনগণের সঙ্গে প্রকৃত সংযোগ স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। এর ফলে জনগণের মধ্যে হতাশা, অনাস্থা এবং গণতন্ত্রের দুর্বলতা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা, জনগণের সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেওয়া এবং যুবসমাজ ও নারীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বাড়ানো।

মনে রাখতে হবে, যখন রাজনৈতিক দলগুলো স্বার্থের রাজনীতি করে, তখন জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয় এবং গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে, যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এই সমস্যার সমাধানে, দলীয় নেতাদের উচিত জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে তোলা এবং তাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক মনোভাব পোষণ করা। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করা এবং নৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থাত্, গণতন্ত্রের সফলতা ও কার্যকারিতার জন্য জননেতা অপরিহার্য। ‘জনরাজনীতি’ মূলত জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের সমস্যাগুলোর সমাধান এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। জনরাজনীতিতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ন্যায়বিচার এবং সর্বোচ্চ মানের সরকারি সেবা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা থাকে। প্রসঙ্গত, আমরা তারেক রহমানের এক সাম্প্রতিক বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি দিতে পারি; তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতি যদি জনগণের সেবা করতে না পারে, তবে সেই রাজনীতি অকার্যকর। এটাই রাজনীতির আসল শিক্ষা।’ এটা যেন দার্শনিক জাঁ জ্যাক রুশোর কথারই প্রতিধ্বনি! ‘সামাজিক চুক্তি’ তত্ত্বে রুশো বলেছেন, গণতন্ত্র এবং জনগণের স্বশাসনই সত্যিকারের রাজনীতি। জনগণ একত্রিত হয়ে সাধারণ ইচ্ছার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সমাজে সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।