পঞ্চম দফায় তিন দিনের হিট অ্যালার্ট আজ শুরু- হিট স্ট্রোকে সাত জনের মৃত্যু
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মোঃ সাইফুল ইসলামঃ
অভাবনীয় অসহ্য তাপদাহ ক্রমশ প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। কবে পরিত্রাণ ঘটবে এই নাভিশ্বাস দশার তা অনিশ্চিত। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকির মধ্যে কালাতিপাত করতে হচ্ছে অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষকে। প্রতিদিন হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। গতকাল শনিবারও হিট স্ট্রোকে একজন শিক্ষকসহ দেশে অন্তত: ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রখর তাপে বহু মানুষ হিট স্ট্রোকের মতো প্রচণ্ড অসুস্থতায় পতিত হচ্ছেন। খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে তীব্র হতে অতিতীব্র তাপদাহে জনজীবন কাহিল। সিলেট বাদে পুড়ছে পুরো দেশ, বিপর্যস্ত জনজীবন। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কায়িক শ্রমিকরা। মানুষের পাশাপাশি হিটস্ট্রোকে বিভিন্ন পশুপাখি মারা যাচ্ছে। বেড়েছে ডায়রিয়া, জ্বরসহ বিভিন্ন রোগ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। পোলট্রি শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফল-ফসল রক্ষা নিয়ে চাষিরা দুশ্চিন্তায়। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় পঞ্চম দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হচ্ছে।
সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট আজ রোববার সকাল থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তবে এ দফায় বাদ পড়ছে সিলেট অঞ্চল। কারণ সেখানে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টির আভাস থাকছে। গতকাল আবহাওয়া ও ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রধান ড. শামীম হাসান মিয়া এ তথ্য জানান। চার দফায় ৭২ ঘণ্টা করে ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করে আসছে আবহাওয়া অধিদফতর। সর্বশেষ ২৫ এপ্রিল ৭২ ঘণ্টার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল।কিন্তু গরমের তীব্রতা না কমায় আজ থেকে ৫ম দফায় নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট শুরু হচ্ছে।
এদিকে তীব্র দাবদাহে রেল লাইন বেকে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকায় ট্রেন ধীর গতিতে চালানোর নির্দেশ প্রদান করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন-ওশি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ’পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং কর্মক্ষেত্রে জৈবরাসায়নিক দূষণ’: শীর্ষক এক সেমিনার থেকে বিশেষজ্ঞরা তাপদাহর এই ভয়াবহ অবস্থায় দুর্যোগ পরিস্থিতি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। আবহাওয়াবিদরা বলছেন,এবছর তাপদাহ দীর্ঘ মেয়াদী হওয়ার পেছনে এপ্রিলে দেশে কালবৈশাখী না হওয়াকে অন্যতম অনুসঙ্গ বলে তুলে ধরেছেন। তারা জানান, দিন দিন এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ বাড়ছে আর কমছে বজ্রঝড়ের সংখ্যা। চলতি এপ্রিল মাসে গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে ৭-৮ টি কালবৈশাখী-বজ্রঝড় হয়। কিন্তু এই বছর হয়েছে মাত্র একটি। বৈশাখ মাসের সঙ্গে বৈশাখী ঝড়ের এক নিবিড় সম্পর্ক। মধ্য এপ্রিলে শুরু হওয়া বৈশাখের আজ ১৫ তারিখ। কিন্তু এবার এ ঝড়ের সংখ্যা সামান্য। যা হয়েছে সিলেট বিভাগেই। ফলে সিলেটের তাপমাত্রা স্বাভাবিক আছে। এপ্রিল মাসে সাধারণত তাপদাহ হয়। আবার এক সময় বজ্রঝড় হয়ে সেই গরম প্রশমিত হয়।অত:পর আবহাওয়া একসময় আবার গরম হয়। এভাবে তাপ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে চলে এ মাস। কিন্তু এবারের এপ্রিল মাসে ঘটেছে ব্যতিক্রম। তীব্র তাপপ্রবাহ, জলবায়ু পরিবর্তন, বজ্রমেঘ সৃষ্টি না হওয়া-এসব কারণেই এবার বজ্রঝড়ের সংখ্যা কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন,বজ্রঝড় কমে যাওয়ার এ অবস্থা অস্বাভাবিক। গত ৭ এপ্রিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর,ঝালকাঠি ও বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে বজ্রঝড় বা কালবৈশাখী বয়ে যায়। দক্ষিণ জনপদে এ সময় ঝড় বেশ অস্বাভাবিক।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ সময়ের ঝড় সাধারণত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চলে শুরু হয়। এবার এর ব্যতিক্রম ঘটল। আবহাওয়াবিদ ড.মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ১৯৮১ থেকে চলতি এপ্রিল মাসের উপাত্ত তুলে ধরে বলেন,এই ৪৩ বছরে এপ্রিল মাসে ৩৬৫টি বড় বজ্রঝড় হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝড় হয়েছিল ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে-১৪টি। আর ১৯৯৯ এবং ২০০৯ সালে সবচেয়ে কম চারটি করে ঝড় হয় এপ্রিলে। গত বছরের এপ্রিলে বজ্রঝড় বা ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল সাতটি। ২০২২ এবং ২০২১ সালে হয় যথাক্রমে নয়টি ও আটটি। আর এ বছর মাত্র একটি।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চূয়াডাঙ্গায়: গতকাল শনিবার রাতে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চূয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ৫, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৫, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে ৪০ দশমিক ৪, যশোরে ৪১ দশমিক ৬, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।