পরিবেশ রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর আরো বেশী যত্নবান হওয়া দরকার : তথ্যমন্ত্রী
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর আরো বেশী যত্নবান হওয়া দরকার।
অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি খেয়াল করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মতো একটি প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে রাস্তা বানাতে গিয়ে আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির পাশে ৩শ’ ফুট পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলেছে। এটি আমাকে প্রচন্ড পীড়া দিয়েছে।’
ড. হাছান বলেন, পাহাড় কেটে এভাবে রাস্তা করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্য্য হচ্ছে পাহাড়। তাই পাহাড় সংরক্ষণ করে এবং পাহাড়ের অবস্থান বজায় রেখে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা উচিৎ।
চট্টগ্রামে উন্নয়ন কার্যক্রমের সময় পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভবন বানাতে গিয়ে, উন্নয়ন কর্মকা- চালাতে গিয়ে যেন পরিবেশ-প্রকৃতি যাতে নষ্ট এবং নান্দনিকতা যেন দৃষ্টিকটু না হয়, সেটি মাথায় রাখতে হবে।’
হাছান মাহমুদ আজ শনিবার ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের’ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস. এম. মতিউর রহমান, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, ফরেস্ট্রি’র এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বনের ভেতরে ও বাইরে গাছের সংখ্যা বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আজ থেকে ১১/১২ বছর আগে বাংলাদেশের বৃক্ষাচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ ১৯ শতাংশের নিচে ছিল, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশের বেশী।
তিনি বলেন, গত ১১ বছরে মানুষ বেড়েছে, মানুষের জন্য নতুন বসতি নির্মাণ করতে হয়েছে, শহরগুলোর আকার বেড়েছে, একইসাথে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। দুই লেনের রাস্তা চার লেন হয়েছে, শিল্পায়ন হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এসবের পরও বৃক্ষাচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ বেড়েছে। এর কারণ হচ্ছে, মানুষের মধ্যে গাছ লাগানোর চেতনা জাগ্রত হয়েছে। আগে আমাদের বনভূমিতেই শুধু গাছ ছিল। এখন দেখা যায়, বনভূমির বাইরেও লোকালয়ে প্রচুর গাছ আছে, লাগানোও হচ্ছে।’
ড. হাছান বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ একটি ছোট্ট দেশ বাংলাদেশ। এদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১শ’র বেশী মানুষের বসবাস। তাই মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন। এরপরও বাংলাদেশ পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ দেশ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি (ফাও) সংস্থার কাছে এখন একটি কেস স্টাডি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ-যার মাথাপিছু জমির পরিমাণ পৃথিবীতে সর্বনিম্ন ঝড়-বন্যা, জলোচ্ছ্বাস যে দেশের নিত্য সঙ্গী এং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যেখানে দৃশ্যমান, সেই দেশ কিভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হল, এটিই আজকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কাছে বড় বিস্ময়।
তিনি বলেন, ‘এটি সম্ভব হয়েছে, আমাদের দেশ ছোট হলেও উর্বর দেশ। এখানে জীব বৈচিত্র্য ব্যাপক ও প্রাচুর্যময় বলেই এটি সম্ভবপর হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ লাগানোর প্রস্তাব দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার তিন সন্তানের মধ্যে দুই সন্তানের জন্ম হয়েছে বেলজিয়ামে। জন্মের কয়েকদিন পর আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চিঠি পেলাম, সেখানে লেখা তোমাদের সন্তানদের নিয়ে অমুক দিন অমুক জায়গায় হাজির হতে হবে। সেখানে একটি গাছ লাগানো হবে এবং একটি নেমপ্লেট দেয়া হবে। সেই গাছটি থেকে যাবে, নেমপ্লেটটিও থেকে যাবে। অর্থ্যাৎ প্রতি সন্তান জন্মলাভের পর সেখানে সন্তানের নামে একটি গাছ লাগানো হয়। সেই গাছটি থেকে যাই। সেটি কাটা হয় না। সে যখন বড় হয়, তখন সে নেমপ্লেট থাকায় গাছটাকে খুঁজে পায়।’
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে অনুরোধ জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যত নবজাতকের জন্ম হবে, তাদের নামে যেন একটি করে গাছ লাগানো হয়, সেজন্য একটি এলাকাকে নির্ধারণ করে এ কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ফরেস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট সহায়তা করতে পারে।
ড.হাছান বলেন, ‘এটি যদি আপনারা করেন, তাহলে আপনারা বাংলাদেশে প্রথম কর্তৃপক্ষ হবেন, এই কাজটি করার ক্ষেত্রে। অনেকেই চাইলেও এই কাজটি করতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেও পারবে না, কারণ তাদের গাছ লাগানোর জায়গা নেই।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন,অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার কোন কোন জায়গায় এখন দাবানল ও খরতাপ দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের মত জায়গায় হচ্ছে বন্যা। এটি হচ্ছে পৃথিবীর মাত্র এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার কারণে। মানুষ যেভাবে নির্বিচারে কার্বন নিঃসরণ ঘটাচ্ছে, প্যারিস চুক্তিতে বিভিন্ন দেশ যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছে, সেই প্রতিশ্রুতিগুলো যদি পুরোপুরি বাস্তবায়নও হয়, পৃথিবীর তাপমাত্রা সাড়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার কারণে যেখানে আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। সেখানে তাপমাত্রা সাড়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে সেটি অনুমান করাও কঠিন।’
জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য হুমকি নয় মন্তব্য করে ড. হাছান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগের মোকাবেলা করছি। জলবায়ু পরিবর্তন এখানে বাস্তবতা, হুমকি নয়। এখানে আসবে তা নয়, এটা এসে গেছে। যখন আগ্রাবাদে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়, তখন উচ্চ মধ্যবিত্ত সবাই সেখানে প্লট নিয়েছে, এখন তারা সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। কারণ বর্ষাকালে জোয়ারের পানি সেখানে সবসময় আসে।’
‘চট্টগ্রাম শহরে আমার পৈত্রিক বাড়ি, আশির দশকে আমার বাবা তৈরি করেন’ এ কথা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানে কখনো দেখিনি পানি আসে। প্রায় ১৫ বছর আগে বাড়ির অভ্যন্তরে ড্রেনের মধ্যে দেখি জোয়ারের পানি আটকে আছে।
এর আগে কখনো দেখিনি জোয়ারের পানি বাসা পর্যন্ত চলে আসতে। জোয়ার-ভাটার পানি যেভাবে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় এখন আসছে, এটি আগে ছিল না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।