ক্রীড়া ডেস্কঃ
২০২৩ বিশ্বকাপে ফেভারিটের তালিকায় ছিল পাকিস্তান। ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ হলেও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় বাবর আজমদের সম্ভাবনা দেখেছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। যদিও হয়নি সেটি। বরং বিশ্বকাপ থেকেই তাদের পথ হারানো শুরু। যেটি এখনও চলছে। মাঠের ক্রিকেট তো আছেই, মাঠের বাইরেও এলোমেলো পাকিস্তান ক্রিকেট।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় অধিনায়কের পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে বাবরকে। তিন ফরম্যাটের কোনোটিতেই আর নেতৃত্বে নেই এই ব্যাটার। স্বার্থ সংঘাতের অভিযোগ ওঠায় প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান ইনজামাম-উল-হক। দিনকয়েক আগে কোচিং স্টাফ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন মিকি আর্থার। এবার পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘অভিভাবক’-ও সরে দাঁড়ালেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ পদত্যাগ করেছেন।
গত জুলাইয়ে পিসিবির ১০ সদস্যের অন্তর্র্বতীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি (আইএমসি) করে দেয় পাকিস্তান সরকার। এই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন আশরাফ। এই কমিটিরর দায়িত্ব ছিল, চার মাসের মধ্যে বোর্ডের স্থায়ী চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন আয়োজন করা। যদিও নির্ধারিত নভেম্বরে মধ্যে তারা চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে পারেনি। ফলে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক এই কমিটির মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ান। সেই অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল আশরাফের দায়িত্বের মেয়াদ। তবে তার আগেই হঠাৎই পদত্যাগ করেছেন ৭২ বছর বয়সী ক্রিকেট কর্তা।
ভাবা হচ্ছিল, আইএমসির নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আশরাফই হতে যাচ্ছেন পিসিবির স্থায়ী চেয়ারম্যান। কিন্তু তিনি সরে দাঁড়ানোয় আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হলো। পিসিবি এখনও জানায়নি কে হতে যাচ্ছেন বোর্ড প্রধান।
গত শুক্রবার ছিল আইএমসি’র চতুর্থ সভা। এখানেই আশরাফ পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়েছেন বলে খবর পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম জিও সুপার-এর। কারণ হিসেবে উপস্থিত সদস্যদের তিনি জানিয়েছেন, “ক্রিকেটের ভালোর জন্য আমি কাজ করেছি। তবে এভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। এখন সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর (আনোয়ার-উল-হক) ওপর।”
পাকিস্তানি মিডিয়ার খবর, চাপের মুখেই সরে দাঁড়িয়েছেন আশরাফ। সাম্প্রতিক সময়ে তার কিছু সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয় পাকিস্তান সরকার। ২০২৩ বিশ্বকাপ থেকেই পাকিস্তান ক্রিকেটের যে নিম্নমুখী গ্রাফ, তাতে দায় আশরাফের ওপরই বর্তায়। তার সময়েই বাবরকে সরানো হয়েছে নেতৃত্ব থেকে। প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ইনজামাম। সবশেষ কোচদের পদত্যাগ আরও কঠিন করে তুলেছিল আশরাফের চেয়ার।
আশরাফ বোর্ড প্রধান থাকাকালীন নানা বিতর্কের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট। সাবেক অধিনায়ক বাবরের সঙ্গে পিসিবির এক কর্তার হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। শোনা যায়, সেটিও এসেছিল আশরাফের নির্দেশেই। এছাড়া বিশ্বকাপে পাকিস্তানের খারাপ পারফরম্যান্সের জন্যও বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন আশরাফ। সাবেক পিসিবি চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি সম্পর্কেও ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করেছিলেন তিনি। সেকারণেই নাকি স্বেচ্ছায় পিসিবির দায়িত্ব ছেড়েছেন তিনি।
মাঠের ক্রিকেটে পাকিস্তানকে বলা হয় ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। দেশটির ক্রিকেট পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরাও তো ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। কখন কাকে কোন দায়িত্বে দেওয়া হচ্ছে, স্পষ্ট নয়। প্রতিনিয়তই বদলায় তাদের নীতি নির্ধারক। বোর্ড প্রধান থেকে শুরু করে কোচ, নির্বাচক, টিম ডিরেক্টর- সব জায়গায় পকিল্পনার অভাব পাকিস্তানে।
আশরাফের কয়েক মাসের দায়িত্বে রদবদল হয়েছে আরও বেশি। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় তিন ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব ছাড়েন বাবর। এর মধ্যে দুই ফরম্যাটের নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। টেস্টের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে শান মাসুদকে। আর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব পেয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।
কোপ পড়েছে কোচিং স্টাফের ওপরও। প্রথমে টিম ডিরেক্টর মিকি আর্থার, প্রধান কোচ গ্রান্ট ব্র্যাডবার্ন ও ব্যাটিং কোচ অ্যান্ড্রু পাটিকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের নতুন নিয়োগ দেওয়া হয় লাহোরের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে। যদিও এই তিনজই পদত্যাগ করেছেন।
এত রদবদল করেও তো লাভ হচ্ছে না পাকিস্তানের ক্রিকেটের। বিশ্বকাপের পর এখনও জয়ের মুখ দেখেনি তারা। অস্ট্রেলিয়া সফরে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হেরেছে ৩-০তে। এখন নিউজিল্যান্ডে খেলছে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সেখানেও হোয়াইটওয়াশ হওয়ার চোখরাঙানি। প্রথম চার ম্যাচেই হেরেছে আফ্রিদিরা।
এত বিশৃঙ্খলতার মধ্যে সবশেষ পিসিবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। মাঠের ক্রিকেটে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স, বোর্ডের ভেতরেও স্বস্তি নেই। পাকিস্তানের ক্রিকেটে আসলে হচ্ছেটা কী?