পানি সংকটে ধান উৎপাদন কমবে ১০ শতাংশঃ তিস্তা রোডমার্চের সমাবেশে বক্তারা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,রংপুরঃ
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বামজোটের অন্যতম নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, এই খরাকালে তিস্তা নদীতে পানি মিলছে না বললেই চলে। এই ভরা বোরো মৌসুমে পানি সংকটের কারণে ধান উৎপাদন ১০ শতাংশ কমে যাবে। নদীতে পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে। আর্সেনিকের মাত্রা বাড়ছে, হারিয়ে যাচ্ছে বিশাল মৎস্য সম্পদ, বিঘ্নিত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বরে তিস্তা ব্যারেজ রোডমার্চ ঘিরে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা সুরক্ষার দাবিতে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে রোডমার্চের আয়োজন করে বাসদ।বামজোট নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, রংপুর অঞ্চলের ধান, পাট, আলুসহ অন্যান্য কৃষি ফসল দেশের অনেকাংশে চাহিদা পূরণ করে। এখন পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত আর ক্রমান্বয়ে উত্তরাঞ্চল মরুকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এ সময় তিনি বর্তমান সরকারের লুটপাট, দুর্নীতি আর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে মরুকরণের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।রংপুর জেলা বাসদের আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, কেন্দ্রীয় সদস্য জুলফিকার আলী, সিরাজগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক নবকুমার কর্মকার, নওগাঁ জেলা আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, গাইবান্ধা জেলা সদস্য লিপি আক্তার, বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দিলরুবা নুরী, নাটোর জেলা সমন্বয়ক দেবাশীষ, রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম, সদস্য অমল সরকার, ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রায়হান প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, উজানের দেশ থেকে নেমে আসা নদীগুলো জালের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেশের ঋতুবৈচিত্র্য, প্রাণপ্রকৃতি ও কৃষিকে রক্ষা করেছে। কিন্তু ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচ প্রকল্পের নামে একে একে ৪৯টি নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহার করার আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছে।
বক্তারা আরও বলেন, তিস্তা চুক্তির বিষয়টি দুই দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়, এতে কোনো রাজ্য সরকার বাধা দিতে পারে না। নতজানু নীতি পরিহার করে তিস্তা পানি চুক্তিতে সরকারকে জোড়ালো ভূমিকা রাখতে হবে। এতেও সমাধান না হলে আন্তর্জাতিক ফোরামে এটি অভিযোগ আকারে পেশ করে দ্রুত এই সংকট নিরসন করতে হবে।
বামজোট নেতারা বলেন, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক বৈরীপূর্ণ হলেও তারা সিন্ধু নদের পানি প্রত্যাহার করেনি। সরকার দাবি করে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বন্ধুত্বের নমুনা পানি প্রত্যাহারে বর্ষাকালে সব গেট খুলে দিয়ে আমাদেরকে বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। আবার সীমান্তে আমাদের দেশের মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাম্রাজ্যবাদী ভারত দেশে ভূ-প্রাকৃতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল ঢাকা থেকে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে এই রোডমার্চের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার ছিল রোডমার্চের সমাপনী দিন। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরের প্রধান সড়ক পথ রংপুর জিলা স্কুল মোড় গিয়ে রোডমার্চটি তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে যাত্রা করে।