পিটুনির দুইদিন পর বাবার মৃত্যু, দুই ছেলে গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২৩

গাজীপুর প্রতিনিধি:

নব্বই বছর বয়সী বাবার সামনে তার এক ছেলেকে পেটাচ্ছিল অন্য দুই ছেলে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ওসমান বেপারী এ দৃশ্য সহ্য করতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে দুই ছেলের পিটুনির হাত থেকে অন্য ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন বৃদ্ধ ওসমান বেপারী। কিন্তু বাবাকেও ছাড় দেয়নি পাষণ্ড দুই ছেলে শরীফুল ইসলাম ও মাহবুবুল আলম। প্রকাশ্যেই বাবাকে পেটান তারা। এতে মাথা ও চোখে গুরুতর আহত হন ওসমান বেপারী। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতেও ফিরেও আসেন তিনি। অবশেষে মৃত্যুর নিচে চাপা পড়ে ওসমান বেপারীর বেঁচে থাকার সব আকুতি, সব চেষ্টা।
আজ মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানা এলাকার সারদাগঞ্জ গ্রামের বাড়িতে তিনি মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কাশিমপুরের সারদাগঞ্জ গ্রামের ওসমান বেপারী ধনাঢ্য একজন কৃষক। বেশ জমি-জিরাত রয়েছে তার। ওসমান বেপারীর দুইটি সংসার রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে দুই ছেলে ও দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে দুই ছেলে।

গ্রেপ্তার দুই ছেলে শরীফুল ইসলাম ও মাহবুবুল আলম

প্রথম স্ত্রীর ঘরের ছেলে মাহবুবুল আলম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরের শরীফুল ইসলাম এক হয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরের অন্য ছেলে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশের ধারণা বাবার জমি-জিরাতে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে এ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গত শনিবার শরীফুল ও মাহবুব মিলে শফিকুলকে মারপিট করতে থাকে। শফিকুলকে মারপিটের হাত থেকে রক্ষার জন্য বৃদ্ধ ওসমান বেপারী এগিয়ে আসেন। এ সময় তাকে শরীফ ও মাহবুব মাথা ও চোখে আঘাত করলে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দ্রুত ওসমানকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়া হয়। শফিককে নেওয়া হয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসা শেষে সোমবার ওসমানকে বাড়িতে আনা হয়। মঙ্গলবার সকালে তিনি মারা যান।
কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ রাফিউল করিম, ওসমান বেপারী অনেক সম্পত্তির মালিক। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সেই সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে ভাইয়েদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। এক পর্যায়ে তারা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। শফিকুলকে মারপিট করার সময় বৃদ্ধ ওসমান বেপারী তাদের শাসন করতে এগিয়ে গেলে তাকেও আঘাত করা হয়। এ ঘটনার তিনদিন পর মঙ্গলবার ওসমান বেপারী মারা যান।
ওসি বলেন, এর পরপরই শরীফুল ইসলাম ও মাহবুবুল আলমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শরীফ ও মাহবুবকে আসামি করে শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।