পুকুর বাঁচাতে খালের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৫:৪২ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,নাটোরঃ  

বহুকাল ধরে নাটোরের গুরুদাসপুরের বুক চিরে যে কয়টি নদী বয়ে চলেছে তার মধ্যে মির্জা মাহমুদ অন্যতম। ষাটের দশক থেকে নদীটির পাড় ঘেঁষে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে দখল শুরু হয়। অব্যাহত দখল-দূষণে চিরচেনা রূপ হারিয়ে মির্জা মাহমুদ এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে।গুরুদাসপুরের তুলশীগঙ্গা নদীর সোনাবাজু এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়ে চাপিলার কৈডিমা, আলীপুর, চৌদ্দমাথা, শাহীবাজার চিরে বড়াইগ্রামের আহম্মেদপুর গিয়ে নন্দকুঁজা নদীতে নিজেকে বিলীন করেছে মির্জা মাহমুদ নদী। এই নদীকে খাল নাম দিয়ে কৈডিমা থেকে ধানুড়া মিল্কি বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটারের খনন কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ১০ ফুট গভীর এবং ৬০ ফুট প্রস্থ করে খালটি খনন করার কথা। কৈডিমা ব্রিজ থেকে উত্তরে আফজাল হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত নকশা মোতাবেক খনন করা হয়েছে। কিন্তু আফজাল হোসেনের বসতবাড়ি, স্থানীয় আব্দুর রশিদ হাজির ৬ বিঘা এবং টিপু নয়নের ৫ বিঘা পুকুর খালের ‘খনন নকশায়’ পড়েছে। মূলত এসব ব্যক্তি খালের জায়গা দখল করে রেখেছেন। বাঁধ দিয়ে করেছেন পুকুরও।

খালপাড়ের বাসিন্দা মকলেছুর রহমান, ইব্রাহিম খাঁ, রাসেল রহমানসহ স্থানীয়রা ইত্তেফাককে জানান, আফজালের বাড়ি এবং দুইটি পুকুর খালের পেটে হওয়ায় সেখান থেকেই উত্তরে অন্তত ৭ থেকে ৮শ ফুট খনন করা হয়নি। বরং, বাড়ি আর পুকুর বাঁচাতে খালের প্রকৃতি পরিবর্তন করে আফজালের বাড়ির সামনের পশ্চিমে সরিয়ে ৬০ ফুট প্রস্থের স্থলে ১০ ফুট প্রস্থে আঁকাবাঁকা করে খনন করা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, বাড়ি আর পুকুর বাঁচাতে ঠিকাদার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে উৎকোচ দিয়েছেন খাল দখলকারী ৩ ব্যক্তি। এ কারণে নকশা বহির্ভূতভাবে আফজালের বাড়ি থেকে রশিদ হাজীর পুকুর পর্যন্ত ৭ থেকে ৮শ ফুট খননে এই অনিয়ম করা হয়েছে।খালের পেটে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানানোর প্রসঙ্গে টিপু ও নয়ন ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে খালের জায়গা দখল করে বসতি নির্মাণ করা আফজাল হোসেন বলেন, খালের পেটে বসতি গড়ে তোলা হলেও জায়গাটি তিনি তার নানির কাছ থেকে পেয়েছেন। এ কারণে তার বাড়ি বাদ রেখে পশ্চিম পাশ দিয়ে খাল খনন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) গুরুদাসপুর অফিস জানিয়েছে, পাবনা-নাটোর ও সিরাজগঞ্জ (পানাসি) জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের আওতায় মির্জা মাহমুদ খালটি খনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তিনটি দরপত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের ৮ কিলোমিটারের খনন কাজ পেয়েছে নাটোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শেখ এন্টারপ্রাইজ। মূলত নদীর পানিতে সেচ নির্ভর ফসল উৎপাদন, চাষিদের গবাদি পশু পালন এবং উন্মুক্ত জলারাশিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে এই খনন কাজ।

স্থানীয় বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম বলেন, সরকারি খালটি খনন করতে গিয়ে বাড়ি এবং পুকুর পড়েছে। তাই পূর্বদিকের বাড়ি আর পুকুর বাদ দিয়ে পশ্চিমের তাদের জমি কেটে খাল খনন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান বলেন, খননের নকশা বহির্ভূতভাবে ৭ থেকে ৮শ ফুট খাল সরু করে খনন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শেখ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মিঠু আহমেদ বলেন, বিএডিসি অফিসের নির্দেশনা অনুসরণ করেই খাল খনন করছেন তারা। কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই। স্থায়ী দুই পুকুর মালিক অর্থের বিনিময়ে পুকুর পাড় মেরামত করার প্রস্তাব দিলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।বিএডিসি গুরুদাসপুর অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, নানা ধরনের অভিযোগ আসায় আপাতত খাল খনন বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করে দ্রুত খনন শুরু করা হবে।