পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডি গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৭:২২ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তেলাপোকা মারার স্প্রের বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডিকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির-গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলো ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিঃ কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক বাসায় যে বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় স্কুলপড়ুয়া দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে, সেই কীটনাশক আবাসিক বাসাবাড়িতে ব্যবহার করার জন্য নয়। এই অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ তেলাপোকা মারার এই পেস্টিসাইড বড় গার্মেন্টস, বীজ গুদাম বা অনাবাসিক জায়গাতে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ঘরে এ জাতীয় বিষাক্ত উপাদান ব্যবহার করা যায় না। ঘর-বাড়িতে এগুলো ব্যবহার করলে ব্যবহৃত আবাসস্থল ৭২ থেকে ৯৬ ঘন্টা ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। এরপর দীর্ঘ সময় দরজা-জানালা খোলা রাখতে হয়, যাতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে। বসুন্ধরার ঐ বাসায় ব্যবহৃত তেলাপোকা নাশক এ পেস্টিসাইডে রাসায়নিক উপাদান সঠিক অনুপাতে ছিলো না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই বিষাক্ত উপাদান কোথা থেকে কিভাবে সংগ্রহ করেছে, এর অনুমোদন ছিলো কিনা, এর রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিলো কিনা, মানবদেহের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর এই বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হবে।
সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগ মুহূর্তে হারুনের মোবাইলে ফোন করেন মারা যাওয়া দুই শিশুর বাবা মোবারক হোসেন। লাউডস্পিকার দিয়ে তাদের ওই কথপোকথন উপস্থিত সাংবাদিকদের শোনান গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
সে সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে মোবারককে বলতে শোনা যায়, “কালো টাকার জোরে এই অপরাধীরা যেন ছাড়া না পান। আমি আইজিপির কাছেও বলেছি। আমার অনুরোধ কর্মচারীকে নয়, কারণ কর্মচারীদের কোনো দোষ নেই। মালিকের বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।“
মোবারক বলেন, “আমার দুই সন্তান হারানোর পর জানতে পেরেছি, এই মেডিসিনটা বাসাবাড়ির জন্য নয়। অথচ লিখিত চুক্তি হয়েছে তাদের সঙ্গে; সেখানে এই বিষয়ে কিছুই ছিল না।”
উল্লেখ্য ‘ডিসিএস অরগানাইজেশন লিমিটেড’ পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন। ওই কোম্পানির কর্মীরা ২ জুন বাসায় বালাইনাশক দিয়ে যায়। ওই পরিবার বাসায় ওঠার পর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
৪ জুন সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মোবারক হোসেনের ৯ বছর বয়সী ছেলে শাহিল মোবারত জায়ান। পরে রাতে মারা যায় তার ভাই ১৫ বছর বয়সী শায়েন মোবারত জাহিন।
এ ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলা করেন দুই শিশুর বাবা মোবারক হোসেন। সেই মামলায় ৫ জুন রাতে ডিসিএসকর্মী টিটু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং এমডি ফরহাদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।