কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
গরুর নাম ‘উড়াল সড়ক’। এমন নাম কেন রাখলেন খামারি? এই কৌতূহল থেকেই বেরিয়ে এলো গরুর এমন ব্যতিক্রমী নামকরণের কারণ।
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের কামালপুরের সন্তান সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের চেষ্টায় মিঠামইন উপজেলা থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার খয়রত গ্রাম পর্যন্ত একটি উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আর এ উড়াল সড়কটি উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের খয়রত গ্রামে ইকবাল হোসেন ভূঁইয়ার খামারের পাশ ঘেঁষেই নামবে। মূলত এ কারণেই খামারের মালিক আদর করে তার বড় গরুর নাম রেখেছেন ‘উড়াল সড়ক’।
কোরবানির হাটে বিক্রি করতে খামার মালিক ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া তার গরুটিকে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করেছেন। উড়াল সড়কের ওজন ৩৫ মণ ও ৯ ফুট লম্বা। এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খয়রত গ্রামের সেরা আকর্ষণ ‘উড়াল সড়ক’। ইতোমধ্যেই ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ৩৫ মণ ওজনের গরুটি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উড়াল সড়ক নামের গরুটির সাদাকালো বর্ণের। বেশ শান্ত স্বভাবের। তবে বাইরে বের হলেই মাথা বিগড়ে যায় তার। উড়াল সড়কের ওজন প্রায় ১৪শ কেজি ও লম্বায় ৯ ফুট। শরীরে তেল চকচকে পশম। খিদে পেলে ঘাস-পানি খায়।
এই গরু দেখতে প্রতিদিন ভীড় করছেন শত শত মানুষ। দূর থেকে আসছেন ক্রেতারাও। মালিক দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ টাকা।
করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর এবং বড় গরুর মধ্যে এটি একটি। ‘উড়াল সড়ক’ যেন তেন গরু নয়।
খয়রত গ্রামের আসাব মিয়া বলেন, উড়াল সড়ক গরুটি আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য। আমাদের গ্রামে এমন গরু কখনো দেখিনি। গরুটি দেখতে খুবই সুন্দর।
বৃদ্ধ হাসিম উদ্দিন বলেন, মালিক খুব আউশ করে গরুটি লালন পালন করেছে। গরুটি বিক্রি করার জন্যই তারা দেশীয় খাবার খাওয়াইয়া বানাইছে। এই গরুকে দেখতে অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসছে।
একই এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, হাওর থেকে আমাদের এলাকায় উড়াল সড়ক নির্মাণ হবে। সেই নামে গরুটির নামকরণ করা হয়েছে উড়াল সড়ক। আমার জীবনে এত বড় গরু দেখিনি। ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে গরুটি ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকে দূর-দূরান্ত থেকে গরুটি দেখতে অনেক লোকজন আসছে।
মরিচখালি এলাকার নূর উদ্দিন বলেন, খয়রত গ্রামটি অন্য আট-দশটা গ্রামের মতোই সবুজ গ্রাম। এব্যতিক্রম এই নামকরণের বিষয়ে খামারি ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মিঠামইন উপজেলা থেকে খয়রত গ্রাম পর্যন্ত একটি উড়াল সড়ক করছেন। সড়কটি খামারের পাশ ঘেঁষে নামবে। এ কারণে আমি শখ করে আমার খামারের বড় গরুটির নাম রেখেছি ‘উড়াল সড়ক’।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন কোরবানির হাটে বিক্রি করতে চাই। তাই গরুটিকে অতিরিক্ত যতœ করছি। চার বছর বয়সী এই গরুটি হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের। এর দাঁত আছে ছয়টি। প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ কেজি খাবার খায়। কাঁচা ঘাস, শুকনো খড়, গমের ভূষি, ধানের কুড়া, ছোলা, মিষ্টি কুমড়া খায়। প্রতিদিন গরুটির পেছনে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা খরচ হচ্ছে। এই খামারের এক গাভী থেকেই উড়াল সড়কের জন্ম হয়েছে। আমি দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। প্রয়োজনমতো খাবার ও পরিচর্যা করছি। গত বছর উড়াল সড়কের ওজন ছিল ১২শ কেজি। তখন দাম উঠেছিল সাড়ে সাত লাখ টাকা। এ বছর ওজন ১৪শ কেজি ছাড়িয়ে গেছে। প্রাণী চিকিৎসকদের সহযোগিতায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফিতার মাপে ওজন নিশ্চিত করা হয়েছে। গরুটির ওজন প্রতি সপ্তাহে দেড় থেকে দুই কেজি করে বাড়ছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পন্ডিত বলেন, আমরা নিয়মিত এই খামারটি তদারকি করছি। প্রায়ই ৩৬ মণ ওজনের এই গরুটি এবার কোরবানি হাটে প্রধান আকর্ষণ হবে। উড়াল সড়কের মালিক একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি অনেক পরিশ্রমী। উশা ডেইরি ফার্ম অ্যান্ড অ্যাগ্রো নামে তার একটি খামার রয়েছে। আর এ খামারেই গরুটি বড় করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় নিয়মিত দেখভাল করেছে গ্রামে একটি জীবন্ত ‘উড়াল সড়ক’ আছে।