প্রতি বছরের লোকসানে কোরবানির গরু উৎপাদনে অনীহা খামারিদের
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
যশোর প্রতিনিধি
গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় যশোরের খামারিদের খামারে কমেছে কোরবানির পশুর সংখ্যা। গত বছরের তুলনায় জেলায় এবার এক হাজার কোরবানির গরুর সংখ্যা কমেছে।
খামারিরা বলছেন, বছরের পর বছর লোকসানের সম্মুখীন হওয়ায় কোরবানির পশু উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দাবি গরুর সংখ্যা কমলেও এ বছর যশোরের মোট চাহিদার তুলনায় বেশি কোরবানির পশুর সরবরাহ রয়েছে।
যশোর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ১৪ হাজার ১৩৫টি গরুর খামারের খামারিরা আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৩৯ হাজার গরু প্রস্তুত করেছে। গত বছর এ গরুর সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার। অর্থাৎ গত এক বছরে এক হাজারেরও বেশি গরুর সংখ্যা কমেছে।
জেলার বৃহত্তর খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক বছরে গোখাদ্যের দাম কয়েক ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সব খামারিদের বাজার থেকে গমের ভুসি প্রতি কেজি কিনতে হয় ৪৫ টাকা, ভুসি প্রতি বস্তা ১৮শ টাকা, ভুট্টা প্রতি বস্তা ১৮শ টাকা, বিছলী প্রতি কাউন কিনতে হয় ৩৫শ টাকা করে। এছাড়া অনেক খামারি খাবারের খরচ কমাতে নিজেদের পতিত জমিতে পাকচুন ও নেপিয়ার জাতের ঘাসের চাষ করেন। তবুও সম্প্রতি সময়ে গোখাদ্যে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি এবং কোরবানির মৌসুমে পশুর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় খামার করা এবং কোরবানির পশু উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন খামারিরা।
এ খামারের খামারি সাইদ সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অনেক বিশেষ যতœ নিয়ে কোরবানির জন্য গরু প্রস্তত করি। এ খামারে যতগুলো গরু আছে সবগুলোর বয়স চার বছরের কাছাকাছি। চার বছর এদের পেছনে অনেক শ্রম এবং অর্থ খরচ হয়। বর্তমানে খাবারের দামও বেশি। কিন্তু কোরবানির সময় আমরা ন্যায্য দাম পাইনি। গত বছর লোকসান হওয়ায় এ বছর পশুর সংখ্যা কমে গেছে।
আরেক খামারি মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানির গরু প্রস্তুত করতে তাদের মিশ্র খাবার খাওয়াতে হয়। ফলে খরচ বেশি হয়। খামার থেকে খুবই কম বিক্রি হয়। আর হাটে গরু ওঠালে খরচ বেশি। কিন্তু গরু বিক্রি না হলে তখন ফিরিয়ে আনতে হয়। গত বছর ঢাকা থেকেও গরু ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। এতে করে খামারিদের লোকসান হয়।
সদর উপজেলার বাহাদুরপুর মেহেগনী তলা এলাকার খামারি ইমরান হোসেন। গত বছর তার খামারে কোরবানির পশু ছিল ১৪টি। এ বছর কোরবানির পশু আছে ৬টি। গত বছর তার খামারে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা দামের গরু ছিল। তবে খাবারের দামের সঙ্গে পেরে না ওঠায় এ বছর তার খামারে কোরবানির পশুর সর্বোচ্চ দাম দেড় লাখ টাকার কাছাকাছি।
ইমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানির পশুর পেছনে অনেক খরচ, কিন্তু বিক্রির সময় আমরা দাম পাই না। হাটে ওঠালেও দালালদের ঝামেলা। কষ্ট করি আমরা টাকা নিয়ে যায় দালালরা। গত বছর লস হওয়ায় এ বছর আর ঝুঁকি নেইনি। ফলে গরুর সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, খামারিদের লোকসান হচ্ছে এটা সঠিক না। কারণ মাংসের দাম বেশি। গত বছরের মতো যশোরের চাহিদার তুলনায় এবারও পশু সরবরাহ বেশি, কারণ প্রত্যেক বাড়িতে একটা দুইটা করে কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছে অনেকে। ফলে খামারে পশুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও মোট পশুর সংখ্যা কিন্তু কমেনি। খামারিরা যাতে ন্যায্য দাম পায় সেদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নজর রয়েছে।