প্রবল বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়ক ডুবে গেছে

ভোগান্তিতে নগরের বাসিন্দারা

প্রকাশিত: ৫:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০২৪

সাইফুল ইসলাম :

শুক্রবার (১২ জুলাই) ভোর চারটা থেকে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। এতে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ সড়ক ডুবে গেছে। এছাড়া অলিগলিতে কোথাও হাঁটু কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে। টানা ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীর বাসিন্দারা।

প্রবল বৃষ্টিতে রাজধানীর নটরডেম কলেজের সামনে, আরামবাগ, মতিঝিল, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মালিবাগ রেলগেট, মৌচাক, মগবাজার, তেজগাঁও, খিলগাঁও, বাসাবো, কাকরাইল, পল্টন, পুরান ঢাকা, বংশাল, সূত্রাপুর, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, মোহাম্মদপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও মিরপুরসহ বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তায় হাঁটু পানি জমায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।


ভোগান্তিতে পড়া রাজধানীর বাসিন্দারা জানান, আজ ছুটির দিন হওয়ায় গণপরিবহন কম। তার ওপর বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় গণপরিবহন তেমন একটা নেই। যেগুলো আছে, সেগুলোও পানির কারণে ধীরগতিতে চলছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় রিকশাও আজ কম। রিকশাচালকরা পঞ্চাশ টাকার ভাড়া দেড়’শ-দুই’শ টাকা দাবি করছেন। সিএনজি বা অটোরিকশা চালকদের ও আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সকাল থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে ডুবেছে রাজধানীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানঘেরা এলাকা নিউমার্কেট। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে শুরু করে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কে জমে আছে বৃষ্টির পানি। আর এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাস্তার পার্শ্ববর্তী অপেক্ষাকৃত নিচু ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

বৃষ্টির সময় উপচে সড়কের সব পানি প্রবেশ করেছে মার্কেটের ভেতর। ফলে দোকানে রাখা শাড়ি, কাপড়, বই, জুয়েলারিসহ অন্যান্য সবকিছুই ভিজে গেছে। এমন অবস্থায় সব মিলিয়ে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।


পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার সড়কগুলোতে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে। পানিতে ডুবে গেছে বিভিন্ন অলিগলি। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি। নিচে নেমে দেখি বাসার তিন সিঁড়ি পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। পানিতে গলি ডুবে যাওয়ায় ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা সব ভেসে উঠেছে।‌ আশেপাশে অনেক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
মিরপুরের বাসিন্দা আবু বকর বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানীর অলিগলিসহ বিভিন্ন সড়ক ডুবে যায়। গত ১৫-২০ বছর আগে যেমন ছিল এখনও একই সমস্যা আছে। কোনও উন্নতি নেই। একের পর এক মেয়র আসছেন-যাচ্ছেন কিন্তু জলাবদ্ধতার সমস্যা কেউ নিরসন করতে পারছে না। মেয়ররা সবসময় বলে জলাবদ্ধতা আর হবে না। কিন্তু দেখা যায় অল্প সময়ের বৃষ্টিতে ঠিকই জলাবদ্ধতা হয়। আবার এই ব্যর্থতার দায়ভারও কেউ নিচ্ছে না।

মতিঝিল এলাকায় গাড়ি পার্ক করে রাখা সুরুজ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সকাল থেকে এত বৃষ্টি হয়েছে যে আমার গাড়িটি প্রায় ডুবেই গেছে। দুই-তিন ঘণ্টা ধরেও পানি সরছিল না। শুধু আমারটি না যে কয়টি গাড়ি পার্ক করা ছিল সবগুলো ডুবে যাওয়ার মতো অবস্থা। গাড়ি রেখে যে অন্য কোনও মাধ্যমে বাসায় যাবো সেই উপায় নেই। বৃষ্টির কারণে সবকিছু থমকে ছিল। আশেপাশে রিকশা বা বাস কিছুই চলছিল না।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, শুধু ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়ে তারা ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির জানান, সকাল ৬টা থেকে ৯ পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সারাদিনই থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ভারী বৃষ্টির পানি সরাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন। তিনি বলেন, শুক্রবার (১২ জুলাই) ভোর থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এছাড়াও ১০টি অঞ্চলে কাজ করছে ১০টি কুইক রেসপন্স টিম (ছজঞ)। প্রতিটি কুইক রেসপন্স টিমে ১০ জন কর্মী রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে প্রধান প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনের জন্য কল্যাণপুরে ডিএনসিসির পাঁচটি পাম সকাল থেকে একযোগে কাজ করছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছে বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের। তিনি বলেন, যেখানে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তা নিরসনে সকাল থেকেই কাজ করছেন। অনেক এলাকায় ইতোমধ্যেই জলাবদ্ধতার যে সমস্যা ছিল তা নিরসন হয়েছে। কাজ এখনও চলমান আছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে জলজট নিরসন হবে।