নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনকে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, মাঠ প্রশাসন, পুলিশসহ প্রশাসনের সব স্তরে এই নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করা সবার জাতীয় দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা কামনা করেছে।
এমতাবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে চিঠিতে তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
১. আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজে অর্পিত দায়িত্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে পালন করে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করা। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং অধিদফতর বা দফতর বা সংস্থা থেকে তাদের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবিলম্বে নির্দেশ প্রদান।
২. শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিও অনুরূপ নির্দেশ জারি করা।
৩. নির্বাচন পরিচালনার কাজ অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তথা সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে তাদের যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচনের কাজে জড়িত আছেন, নির্বাচনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ছুটি প্রদান বা অন্যত্র বদলি করা বা নির্বাচনি দায়িত্ব ব্যাহত হতে পারে—এমন কোনও দায়িত্ব প্রদান থেকে বিরত থাকা।
এ অবস্থায় উল্লিখিত নির্দেশনা জারিসহ আনুষঙ্গিক কার্যাদি সম্পন্ন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৬ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৫ অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা প্রদান সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সবার জন্য আবশ্যিক পালনীয় দায়িত্ব। এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৪৪৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী—নির্বাচনি সময়সূচি জারি হওয়ার পর থেকে ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া ওই অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও সম্পাদনের জন্য সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তথা সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত অফিস বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্য থেকে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেসরকারি অফিস বা প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রিজাইডিং অফিসার বা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার নিয়োগ করার প্রয়োজন হবে।
সরকারি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষককে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ ছাড়াও নির্বাচনি বিভিন্ন দায়িত্ব প্রদান করা হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো ভোটকেন্দ্র হিসেবে এবং প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে।
নির্বাচনি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন জানিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়—আগেও তারা নির্বাচনের কাজে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করেছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাচনি কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ১৩ নম্বর আইন) রয়েছে। এতে কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে তিনি তার ওইরূপ নিয়োগের তারিখ থেকে নির্বাচনি দায়িত্ব অব্যাহতি না পাওয়া পর্যন্ত তার চাকরির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রেষণে চাকরিরত আছেন বলে গণ্য হবেন।
প্রেষণে চাকরিরত থাকাকালে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষেত্রমতে রিটার্নিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন এবং তিনি তার যাবতীয় আইনানুগ আদেশ বা নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকবেন। প্রেষণে চাকরিরত থাকাকালে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব প্রাধান্য পাবে। এমতাবস্থায় সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য রিটার্নিং অফিসারের যেকোনও নির্দেশ জরুরি ভিত্তিতে পালন করার নিশ্চয়তা বিধান করা প্রয়োজন।
