আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
১৮ তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার প্রায় এক সপ্তাহ পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত সেই শুভেচ্ছাবার্তায় শেহবাজ বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন।’
২০১৪ এবং ২০১৯ সালের পর এবার টানা তৃতীয়বার পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয় পেয়েছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে মাত্র দু’জন রাজনীতিবিদ টানা তিন বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন— পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং নরেন্দ্র মোদি। রোববার মোদি ও তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রি পরিষদের সদস্যরা শপথগ্রহণ করেছেন।
শুভেচ্ছাবার্তায় কেবল শপথ গ্রহণের ব্যাপারটিই উল্লেখ করেছেন শেহবাজ; আর মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানরা উপস্থিত থাকলেও পাকিস্তানের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।
অথচ, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের পর প্রথমবার যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মোদি, সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেহবাজ শরিফের বড়ভাই এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
তারপর দশ বছর ধরে টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দুই প্রতিবেশী দেশ। এই টানাপোড়েন সবচেয়ে তীব্র হয়েছে ২০১৯ সালে কাশ্মিরের পুলোওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলা এবং তার জেরে ওই বছরই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্বশাসন বাতিলের পর থেকে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই জম্মু-কাশ্মিরের দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। উভয় দেশই জম্মু-কাশ্মিরকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে এবং এ ইস্যুতে গত ৭৫ বছরে একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে দুই দেশ।
জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্বশাসন বাতিলের পর থেকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করে পাকিস্তান, নয়াদিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখে ইসলামাবাদ।
তবে গত বছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেহবাজ শরিফ বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ফের আগের মতো করতে আগ্রহী তিনি। কিন্তু আয়তনে ভারতের ছয়ভাগের একভাগ দেশ পাকিস্তানের সামনে সেই সুযোগ বেশ সীমিত।
দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান ও মুসলিমদের ব্যাপারে বিজেপির রাজনৈতিক অবস্থান ইসলামাবাদের জন্য হতাশাজনক। লেখক এবং পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডনের কলামিস্ট জাহিদ হোসাইন এএফপিকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিজেপির এবারের পুরো নির্বাচনী প্রচারাভিযান মুসলিম ও পাকিস্তান বিদ্বেষী বক্তব্যে পরিপূর্ণ ছিল। আর নির্বাচন উপলক্ষে যেসব ভাষণ দিয়েছেন মোদি— তাতে এটি স্পষ্ট যে সামনের বছরগুলোতে ভারতের মুসলিমরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হবেন।’