চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নানা নাটকীয়তার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠেই সরব থাকছে ‘নৌকা’। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবির মুখেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে মাঠে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনটাই জানিয়েছেন ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরি।
তিনি বলেন, ‘ফটিকছড়িতে মাঠে শেষ পর্যন্ত নৌকা থাকবে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম দেখা করলে এ নির্দেশনা দেন। আমরা ভোট চাইতে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। সবাই যেন কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দেন তা লোকজনকে বোঝাচ্ছি।’
এর আগে ২৮ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এবং ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ কয়েকজন নেতাকে ফোন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যেতে বলা হয়। বিপরীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারীকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি এলাকায় প্রচার হলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। নির্বাচনের মাঠে নৌকা না থাকলেও সুপ্রিম পার্টির পক্ষে কাজ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে, নৌকার প্রার্থী মাঠে সরব থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান একতারা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ। তার সমর্থনে নৌকা সরে যাওয়ার গুঞ্জনে যে একটা আশার সঞ্চার হয়েছিল তাতে যেন আবারও ভাটা পড়েছে একতারা প্রতীকে। সাইফুদ্দিন ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে একতারা প্রতীকে ভোট চাইছেন। ভোটারদের দিচ্ছেন উন্নয়নের আশ্বাসসহ নানা প্রতিশ্রুতিও।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী দেখা করেন। এর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। মূলত এর পর থেকে সাইফুদ্দিন আহমদকে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি এলাকায় গুঞ্জন ওঠে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির দফতর সম্পাদক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে ফটিকছড়ি আসনের সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে কিনা তা আমার জানা নেই।’
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বর্তমানে আট প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের খাদিজাতুল আনোয়ার (নৌকা), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মীর মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম (চেয়ার), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ হামিদ উল্লাহ (মৌমবাতি), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শফিউল আজম চৌধুরী (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান (ঈগল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ (একতারা), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী (ফুলের মালা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব (তরমুজ)।
উল্লেখ্য, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে। বর্তমানে তিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। চট্টগ্রামে ১৬টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া একমাত্র মহিলা প্রার্থী তিনি। গত ২০১৪ সালেও মনোনয়ন পেয়েছিলেন খাদিজাতুল আনোয়ার। তবে জোটের কারণে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।