ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতা, বিপাকে ইউএনআরডব্লিউএ

প্রকাশিত: ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের প্রধান ত্রাণ সংস্থা এখন তীব্র তহবিল সঙ্কটের মুখে। তাদের সামনে বিভিন্ন সেবা এখন কাটছাট করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নাই। ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আরেকটি দুর্যোগের মুখে দাঁড়িয়ে। এমন অভিযোগও শোনা যায় যে, হামাসের ২০২৩ সালের হামলার সঙ্গে সংস্থার কোনো কোনো কর্মীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।

ইউনাইটেড ন্যাশন্স রিলিফ এবং ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রেফুজিস ইন দি নিয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ) অনেক সমস্যা নিয়ে এখনো গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে কাজ করে যাচ্ছে। জানুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, এখনো সেখানে এই কাজের জন্য তাদের ৩৩ হাজার কর্মী নিযুক্ত আছে। জানুয়ারির শেষের দিকে ইউএনআরডব্লিউএর বিদেশি স্টাফদের পূর্ব জেরুজালেম থেকে ইসরাইল বহিষ্কার করে। তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর লড়াই শুরুর পর ইউএনআরডব্লিউএ এখনো গাজায় প্রধান খাদ্য, ত্রাণ ও চিকিৎসাসেবা দানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। গাজার ২০ লাখ মানুষ মূলত এই সংস্থাটির ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফের মতো জাতিসংঘের অন্যান্য এজেন্সিগুলোও সেখানে ভূমিকা রাখছে।

ইউএনআরডব্লিউএ চলে মূলত মূলত জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর। স্বেচ্ছাসেবীমূলক তৎপরতা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আঞ্চলিক জোটগুলোর সহযোগিতায়। গত বছর ইউএনআরডব্লিউএর পরিচালনা বাজেট ছিল ৮৮০ মিলিয়ন ডলারের ওপর। যার ৯৫ শতাংশই পূরণ হয় সদস্য দেশগুলোর স্বেচ্ছামূলক দান থেকে। মাত্র ৫ শতাংশ জাতিসংঘের মূল বাজেট থেকে অংসে। বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্র সংস্থার তহবিলের সর্ববৃহৎ যোগানদাতা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গত দুই বছরে ইউএনআরডব্লিউএকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০২৩ সালে পরিমাণটি ছিল ৩৭১ মিলিয়ন ডলার, ২০২৪ এ তা কমে ১২২ মিলিয়নে পঁড়ায়। ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণের চাহিদা যখন তীব্রভাবে বাড়তে থাকে-এমন সময় ইউএনআরডব্লিউএর তহবিল সংকুচিত হওয়া শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সংস্থার আরেক বড় তহবিল যোগানদাতা সুইডেন। আর্থিক সমৃদ্ধশালী ইউরোপের এদেশটিও গাজা ইসরাইলের অব্যাহত হামলার পটভূমিতে ত্রাণ যোগান কমিয়ে দেয়। প্রচণ্ড যুদ্ধের মধ্যে পাজার ত্রাণ সরবরাহ রুটগুলো সব বন্ধ হতে বসেছিল। এছাড়া ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেও ধনী দেশগুলোকে পিছিয়ে যেতে হয়। ইউএনআরডব্লিউ ছাড়াও জাতিসংঘের বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি (এফএও) এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিরও তহবিল কমে এই সময়ে। ইউএনআরডব্লিউএ এখন ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়, খাদ্য, পানি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করছে। তাছাড়া খাদ্য, ওষুধ ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের মতো নিয়মিত কাজগুলো সংস্থাটিকে চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

ইউএনআরডব্লিউএ সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বিব্রতকর যে অভিযোগে জড়িয়েছে তা হলো হামাসের ৭ অক্টোবর, ২০২৩ হামলার সহযোগী হিসেবে কাজ করা। ইসরাইল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই মর্মে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিছু নথিপত্রও জমা দেয়। যে ১০ কর্মীর বিরুদ্ধে হামাসের সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে চাকরিচ্যুত করে ইউএনআরডব্লিউএ। তবে এই ১০ জনের মধ্যে দুই জন্য অবশ্য ততদিনে চলমান হামলায় নিহত হয়েছিলেন। ইসরাইলের এই অভিযোগের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও জামানিসহ অনেক দেশ ইউএনআরডব্লিউএকে দেওয়া সহায়তা কমিয়ে দেয়। এ বছর জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইউএনআরডব্লিউএর জন্য মার্থিক সহায়তা যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে শুরু করবে না।

ইউএনআরডব্লিউএর ২০২৪ সালের মার্চে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলের কর্তৃপক্ষ সংস্থাটির কিছু কর্মীকে হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার মিথ্যা বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ঐ কর্মীরা ইসরাইলের হাতে বন্দি হওয়ার পর এ কাজ করতে তাদের ওপর বল প্রয়োগ করা হয়। তবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করে বন্দিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আচরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন। গত বছর প্রথম দিকে এই নিয়ে বিতর্ক শুরুর পর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস বলেন যে, গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ সহায়তার মেরুদণ্ড হলো ইউএনআরডব্লিউএ। তাদের নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করলে সাধারণ মানুষের দুর্দশা বেড়েই চলবে।

ফিলিস্তিনিদের প্রত্যক্ষভাবে ত্রাণ সহায়তাকারী জাতিসংহের একমাত্র এজেন্সি ইউএনআরডব্লিউএ। ১৯৪৯ সালের প্রতিষ্ঠিত এজেন্সিটি তখন থেকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়টি দেখভাল করে আসছে। পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা ছাড়াও জর্দান, সিরিয়া ও লেবাননে সংস্থাটি তৎপর ছিল। জাতিসংঘে সংস্থাটির ম্যান্ডেট তিন বছর পর পর নবায়ন করতে হয়। যদিও গত বছর অক্টোবরে ইসরাইলের মাইনসভায় এর কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে দুটি বিল এনেছিল। ডিসেম্বরে জাতিসংঘ ইসরাইলের ঐ উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে। ইউএনআরডব্লিউএ এখনো কর্মতৎপর আছে বলে জানা যায়।