বয়স যখন বেড়েই চলছে, কী খাব কী খাব না

প্রকাশিত: ১২:৪২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৪

লাইফস্টাইল ডেস্ক রিপোর্টঃ

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর ভালো রাখতে খাদ্য ও পুষ্টির ভূমিকার বিকল্প কিছু নেই। সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখে।বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এবং এগুলোর কার্যকারিতায় পরিবর্তন আসে। জিবের স্বাদ ও কার্যকারিতা কমতে থাকে। অনেকের দাঁত পড়ে যায়, লালা নিঃসরণের মাত্রাও কমে আসে। এ জন্য তাদের খাবার চিবানো ও গলাধঃকরণের ক্ষমতাও কমে যায়। বয়োজ্যেষ্ঠদের থাকে নানা ধরনের রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ প্রভৃতি। তাই তাদের খাবার ও পুষ্টি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আলাদা করে ভাবতে হবে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কী কী পরিবর্তন হয়- 

১. বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে খাদ্য বিপাক ক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে বেশি বয়সের কম ক্যালোরি অর্থাৎ কম খাবারের প্রয়োজন হয়।
২. মাংসপেশি ক্ষয় হওয়ার কারণে শারীরিক শক্তি কমতে থাকে।
৩. হাড় এবং পেশির সমস্যার কারণে বয়স হলে চলাচল এবং নড়াচড়া কমে যায়, যার কারণে শরীর কম ক্যালরি ব্যবহার করে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী রাখতে প্রবীণদের ভিটামিন ও মিনারেল বেশি পরিমাণ প্রয়োজন হয়।
৫. খাবারের রুচি কমে যেতে পারে। এর কারণ হতে পারে স্বাদ বা ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়া দাঁতের রোগ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
৬. ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হৃদরোগ এবং বার্ধক্যজনিত অন্যান্য রোগের কারণে অনেক ধরনের খাবার খাওয়া বারণ হতে পারে।
৭. খাবার থেকে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি ইত্যাদি পুষ্টিগুণ শোষণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। অন্যদিকে হাড়ের ক্ষয়, অপুষ্টিজনিত রোগ বেড়ে যায়।
৮. শরীরের বিভিন্ন বদলের কারণে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের পানির চাহিদা অনুযায়ী তৃষ্ণা না পেতে পারে। ফলের পানিশূন্যতা হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

প্রবীণদের খাদ্যাভাস কেমন হওয়া উচিত- গবেষণায় দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে বয়সের সঙ্গে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে।

আমিষ বা প্রোটিন- মাংসপেশির অতিরিক্ত ক্ষয়রোধ করতে আমিষ জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে। ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি প্রাণিজ খাদ্য আমিষ এবং ভিটামিন বি১২-এর ভালো উৎস। উদ্ভিজ্জ আমিষ পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকারের ডাল, শিম, বাদাম ইত্যাদি থেকে।

পরিমিত খাবার, তবে আরও পুষ্টিকর- বয়স বাড়া ক্যালরি কম খাওয়া প্রয়োজন। বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চলাফেরা ও শারীরিক পরিশ্রম কমে যায়। পাশাপাশি ক্ষুধা ও পানির চাহিদাও কমে যায়। কম ক্যালরি প্রয়োজন হলেও স্বাস্থ্যকর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে বয়স্ক মানুষের। এ জন্য ফলমূল, শাকসবজি, মাছ ও চর্বি ছাড়া মাংস খাওয়া বেশি দরকার। এ সময় ভাত, আলু ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।

ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম- হাড়ের জন্য ভিটামিন ডি জরুরি। হাড়ের ভর নিয়ন্ত্রণ করতে এস্ট্রোজেন উপকারী। তাই মেনোপোজের পর নারীদের হার অপেক্ষাকৃত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, ভিটামিন ডি’য়ের মাত্রা কমে যাওয়া ক্যান্সার, হাঁপানি, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া কঠিন। তাই আলাদাভাবে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা ভালো হবে।

ভিটামিন বি১২- বয়স্ক ব্যক্তিদের পেটে অ্যাসিড উৎপাদন হ্রাস পায়। যার ফলে ভিটামিন বি১২ কম শোষণ হয়। এ ছাড়া বয়স্কদের বিভিন্ন নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারের সমস্যা থাকতে পারে। যাঁরা নিরামিষ খাবার খান, তাঁদের জন্য ভিটামিন বি১২ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য খেতে হবে শিমের বিচি, বাদাম, কলা, মটরশুঁটি ও সবুজ শাকসবজি। আর যাঁরা নিরামিষ খাবার খান না, তাঁদের মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস, ডিম, দুধ, দই ইত্যাদি খেতে হবে।

পটাশিয়াম- বয়স বাড়ার সঙ্গে রক্তচাপ, কিডনিতে পাথর, অস্টিওপোরোসিস এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ রোগগুলো প্রবীণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এ জন্য বয়স্কদের পটাশিয়ামের উৎস হিসেবে খেতে হবে ডাল, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের বীজ, আলু, টমেটো, খেজুর, বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি, যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মটর ইত্যাদি।

আয়রন- বয়স্কদের রক্তস্বল্পতা একটি সাধারণ সমস্যা। আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। এ জন্য খেতে হবে ডালিম, বিটরুট, শাকসবজি, ডাল, বাদাম, চর্বি ছাড়া মাংস, ডিম ইত্যাদি।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্যজনিত বদলগুলো প্রতিরোধ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই বোঝায়। রঙিন ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম, শস্য বীজ এমনকি চা-কফি, ডার্ক চকলেট এর উৎস হতে পারে।

ওমেগা-থ্রি- তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা-থ্রি হল- ইপিএ, ডিএইচএ এবং এএলএ। ইপিএ এবং ডিএইচএ পাওয়া যায় মাছ থেকে। এএলএ পাওয়া যায় উদ্ভিজ্জ খাবার যেমন- আখরোট, তিসির বীজ ও চিয়া বীজ থেকে।ওমেগা-থ্রি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। মাছের তেলও এক্ষেত্রে কার্যকর। মাছের তেলে ইপিএ ও ডিএইচএ থাকে। এছাড়াও শৈবালের তেলেও ডিএইএ পাওয়া যায়। তাই যারা মাছ খান না তারা এটা বেছে নিতে পারেন।

পানি- পানিশূন্যতার কারণে শরীরে অনেক ধরনের জটিলতা কারণ হতে পারে। তাই দিনে নিয়মিতভাবে পানি কয়েকবার পান করতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ পানি পান করার চেষ্টা করবেন।

পরিহার্য খাবার- অতিরিক্ত চিনি এবং চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিহার করবেন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে লবণ পরিমিতভাবে গ্রহণ করবেন। খাবারে অতিরিক্ত লবণের বদলে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।

মাল্টিভিটামিন- এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মাল্টিভিটামিন ক্যাপসুল প্রবীণরা গ্রহণ করতে পারেন। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস সবার জন্য, মনে রাখবেন সুস্থ জীবনযাপন শুরু করার কোনো বয়স নেই।