বাংলাদেশ ক্রিকেটের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব: কার্তিক

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক:

 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গেল কয়েক বছরে অনেকটা বদলে গেছে ক্রিকেট। তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা দিয়ে অংশগ্রহণকারী দলগুলোও উন্নতি করছে, শুধু উন্নতির ছোঁয়া পাচ্ছে না বাংলাদেশের ক্রিকেট। ঘরের মাটিতেই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়তে সংগ্রাম করে, আর দেশের বাইরে গেলে তো পাত্তাই পায় না অন্য দলগুলোর কাছে। এছাড়া আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোতে তো নিয়মিত ব্যর্থ হচ্ছেই।

সবশেষ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর চলমান আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও ব্যর্থতার বৃত্তে আটকা রয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। অথচ বিসিবির রয়েছে ক্রিকেটকে উন্নত করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টাকা, দলে রয়েছে একাধিক নামি তারকা ক্রিকেটার, তাদের সব সুযোগ-সুবিধে থাকার পরও ফলাফল হচ্ছে না আশানুরূপ।

যেখানে তাদের থেকে কম সুযোগ-সুবিধের মধ্যেও জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তানের ক্রিকেট সামনের দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। সবাই পারলে কেন বাংলাদেশ পারছে না? এর পেছনের কারণ হিসেবে ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার দীনেশ কার্তিক মনে করেন বিসিবির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব।

সম্প্রতি ক্রিকেটভিত্তিক গণমাধ্যম ক্রিকবাজের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেন ভারতের সাবেক এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তাদের উন্নতির পথে বড় বাধা। বিসিসিআই-এর পর বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডই বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী বোর্ড এবং ঋণমুক্ত। তাই তারা নিজেদের খেলার অবনতির কারণ হিসেবে অর্থ অভাবের অজুহাতও দিতে পারবে না। অন্যদিকে আফগানিস্তান মাত্র এক দশকের মধ্যে অসাধারণ উন্নতি করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের উচিত নিজেদের ক্রিকেট কাঠামোর দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির দিকে নজর দেওয়া, শুধু স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যে সীমাবদ্ধ না থাকা।’

এ সময় তিনি বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের উন্নতি না হওয়ার আরেকটি কারণ জানিয়ে বলেন, ‘যখন নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশে খেলতে যায়, তখন তাদের বিপক্ষে স্পিন সহায়ক উইকেট তৈরি করা হয় শুধু সেই সিরিজ জেতার জন্য। কিন্তু বিদেশে গিয়ে তারা বিপদে পড়ে। এমনকি টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যানরা আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায় না, কারণ তারা ভালো উইকেটে খেলার সুযোগ পায় না। তাদের উচিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকে নজর দেওয়া-কীভাবে একটি শক্তিশালী দল তৈরি করা যায় এবং খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যায়।’

এদিকে আরেক ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার পার্থিক প্যাটেলও একই সুরে কথা বলেছেন বাংলাদেশকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘সাকিব (আল হাসান), মোস্তাফিজুর (রহমান) বা মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে তাদের কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল না। তারা সব সময় স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায় আটকে থেকেছে। উদাহরণ স্বরূপ, তারা যদি এখন থেকেই তাওহিদ হৃদয়কে পরবর্তী কয়েক বছরের জন্য সহ-অধিনায়ক হিসেবে গড়ে তোলে, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি তৈরি হবে। যেমন ভারত শুভমান গিলকে সহ-অধিনায়ক করেছে। মোহাম্মদ শামি চোট পেলে ভারতের কাছে অর্শদীপ সিং বা হর্ষিত রানার মতো বিকল্প আছে। কিন্তু বাংলাদেশে তা নেই, যদিও তাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামো বেশ ভালো এবং অনেক ভারতীয় খেলোয়াড় সেখানে গিয়ে খেলে ভালো অর্থ উপার্জন করেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রধান সমস্যা হলো তারা পুরোনো খেলোয়াড়দের ধরে রাখে এবং নতুনদের সুযোগ না দেওয়া। পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বাংলাদেশ সেই জায়গায় ব্যর্থ হচ্ছে। এই একই সমস্যার কারণে তারা বারবার একই অবস্থায় ফিরে যায়।’