সেলিনা আক্তার:
নিত্যপণ্যের বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে হতাশা নিয়ে পণ্য ছাড়াই বাড়ি ফিরছেন অনেক ক্রেতারা। মাছ সবজি থেকে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী তিন থেকে পাঁচ কেজির পরিবর্তে আধা কেজি ১ কেজি কিনেই সন্তুষ্টি থাকতে হচ্ছে ক্রেতাদের। আজ শুক্রবার (২১ জুলাই) সকালে পুরান ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ বাজার ও কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুর ব্রিজ মার্কেট সংলগ্ন গরিবের বাজার এবং রনি মার্কেট ঘুরে এমনই তথ্যচিত্র পাওয়া গেছে।
বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, তাদের সীমিত আয়ের সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বিস্তর ফারাক আছে। এসব নিত্যপণ্য এখন তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। দোকানিরা পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সংকটসহ নানান অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে রাখছে। সরকারিভাবে বাজার মনিটরিং করার কথা থাকলেও এবং প্রতিটি দোকানে তালিকা টাঙ্গানো নির্দেশনা থাকলেও কোন বাজারেই তার চোখে পড়েনি। এর ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম হাঁকিয়ে বিক্রি করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে এমন কথা জানালেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে অনেকদিন ধরেই মাছের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালে নেই। বর্ষায় এখন ভরা মৌসুম চললেও বাজারে কমেনি মাছের দাম। বরং তা আরও বেড়েছে। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তি দামের তালিকায় যুক্ত হয়েছে কয়েক পদের সবজি ও রসুন। টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী কাঁচা মরিচ, আদা, আলু ও চিনির দামও রয়েছে অপরিবর্তিত। আজ শুক্রবার (২১ জুলাই) সকালে রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
অর্থাৎ বাজারে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। বরং তাদের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। রামপুরা বাজারে আল আমিন নামের একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি নিউজ পোস্টকে বলেন, বাজারে এলে মাথা ঠিক থাকে না। টাকায় কুলায় না বলে প্রয়োজনের অর্ধেক কেনাকাটা করে বাসায় ফিরতে হয়।
আল-আমিন বলেন, সাধ থাকলেও সাধ্যের মধ্যে মাছ-মাংস কেনা যায় না। পাঙাশ, তেলাপিয়া, সিলভার কার্পের মতো মাছের দামও কেজিপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাড়তি দামের কারণে এসব মাছও এখন আগের মতো খেতে পারি না।
রামপুরার মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে তেলাপিয়ার কেজি ২২০ থেকে ২৬০ টাকা, পাঙাশের কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, সিলভার কার্প বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে। অথচ কিছুদিন আগেও এ তিন পদের মাছের দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকার কম ছিল। আর এ জাতীয় মাছেই আমিষের চাহিদা মিটতো নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। কিন্তু দাম বাড়ায় সেটিও এখন তাদের পাতে জুটছে না। শুধু পাঙাশ, তেলাপিয়া বা সিলভার কার্পই নয়, সপ্তাহের ব্যবধানে অন্যান্য মাছের দামও বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি চাষের নলামাছ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আর আকারভেদে রুই-কাতলা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া চিংড়ি মাছের মধ্যে ছোট আকারের প্রতি কেজির দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। মাঝারি আকারের প্রতি কেজি ৯০০ থেকে হাজার টাকার বেশি। আর আকারে বড় হলে ক্রেতাকে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১২০০ টাকারও বেশি। অন্যদিকে ইলিশ মাছের দামও আকাশছোঁয়া। প্রজনন মৌসুম হিসেবে গত ২০ মে থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই বাজারে ইলিশের সরবরাহও কম। এক কেজির কম ওজনের অর্থাৎ ৮০০ গ্রামের একটি ইলিশ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশের সরবরাহ বাড়লে দামও কমে আসবে।
সকাল থেকে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, আদা, রসুন, আলু ও শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সেই অর্থে দাম কমেনি। গত কয়েক সপ্তাহের ধরেই এসব নিত্যপণ্যের দাম চড়া। উল্টো কোরবানির ঈদের পর থেকে টমেটো, কাঁচা মরিচের দাম থেমে থেমে বাড়ছে। এ দুই পদের সবজি কিনতে ক্রেতাকে বাজারভেদে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার কিছু কমবেশি। বাজারে আলুর কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭৫ টাকায়। আদার দাম প্রায় দুই মাস ধরে ৩০০ টাকার উপরে। এরমধ্যে চলতি সপ্তাহে নতুন করে রসুনের দাম কেজিতে প্রায় ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়েছে ১৭৯ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে স্বস্তি ফেরেনি চিনির দামে। প্রতি কেজি চিনি কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
এলাকাভেদে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগির কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের বাদামি ডিমের হালি এখনো ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।
স্বস্তি ফেরেনি সবজির বাজারেও। সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পেঁপে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং কচুমুখি ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।