বাবা-মা-বোনকে হত্যার পর ঘরে আগুন দেয় ছেলে

প্রকাশিত: ১:০৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৪

সাভার প্রতিনিধি:

সৎমা তাকে হত্যা করবে– এমন কথা জানতে পেরে বাবা, মা ও ছোট বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছেলে হিমেল। একে একে সবাইকে হত্যা করে কেরোসিন ঢেলে কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে হিমেল ও তার সহযোগী আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। পরে অন্যান্য ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তারা রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আগুন নেভায় এবং তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। তারা এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়।

সম্প্রতি সাভারের আশুলিয়ার এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করে জড়িত দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন পিবিআইর ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা। গত ২৪ অক্টোবর আশুলিয়ার জিরাবো এলাকা থেকে আসামি তানভীর হাসান হিমেল (২২) ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হিমেল নিহত বাচ্চু মিয়ার প্রথম স্ত্রীর ছেলে।
পিবিআই জানায়, আশুলিয়ার উত্তর ভাদাইল এলাকার চার তলা ভবনের চতুর্থ তলায় নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতেন মিজানুর রহমান বাচ্চু (৫৩), তাঁর চতুর্থ স্ত্রী স্বপ্না বেগম (২৮) ও মেয়ে জান্নাতুল (৪) ও প্রথম স্ত্রীর সন্তান তানভীর হাসান হিমেল। স্বপ্না বেগম হিমেলের সঙ্গে পারিবারিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। হিমেলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্বামী-স্ত্রী মিলে। ছেলে হিমেলকে হত্যার জন্য তরিকুল ইসলাম তারেক ওরফে হৃদয়কে ভাড়া করেন বাচ্চু। ঘটনার ১০-১২ দিন আগে হিমেলকে হত্যার পরিকল্পনার ব্যাপারে আলোচনা করার সময় তাদের কথোপকথন শুনে ফেলে হিমেল। এ নিয়ে তরিকুলের কাছে জানতে চাইলে সেসব কথা স্বীকার করে। হিমেলের কাছে কান্নাকাটি করে তরিকুল ক্ষমা চায়। এরপর হিমেল তরিকুলকে নিয়ে সবাইকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজায়। এ ঘটনায় নিহত স্বপ্না বেগমের বোন লাবণ্য আক্তার মামলা করলে তদন্তভার পায় পিবিআই।

যেভাবে হত্যাকাণ্ড
গত ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে স্বপ্না মেয়ে জান্নাতুলকে নিয়ে স্কুলে চলে যান। এ সময় বাচ্চু তাঁর কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। সকাল ৯টার দিকে ঘরে ঢুকে হিমেল হাতুড়ি দিয়ে বাচ্চুর মাথায় পরপর দুটি আঘাত করে এবং পরে তারেক বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এর পর সকাল ১০টায় স্বপ্না মেয়েকে নিয়ে বাসায় এলে তারেক স্বপ্নাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে। এ সময় জান্নাতুল চিৎকার করলে হিমেল তাকে খেলনা পুতুল দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে আলমারিতে থাকা স্বর্ণালংকার লুট করে ঘরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং কাঁচি দিয়ে ইস্পাত শিটের দরজা ছিদ্র করে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেয় তারা। পরে অন্যান্য ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ঘরের দরজা ভেঙে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। আসামিরা এই হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়।

পিবিআইর সুপার কুদরত-ই-খুদা জানান, মামলাটির তদন্ত শেষে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি, পুতুল ও কাঁচি উদ্ধার করা হয়েছে।