ক্রীড়া ডেস্ক:
সতীর্থদের কাছে মহাতারকা হলেও তাদের ভালোবাসার আয়নায় সাকিব আল হাসান অমলিন। ভুলত্রুটিগুলো একপাশে সরিয়ে রেখে তাঁকে তারা ভালোবাসেন। তাই তো দেশে যখন হত্যা মামলার হুকুমের আসামি করা হলো সাকিবকে, তখন পুরো দল তাঁকে সমর্থন করে গেছে। নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে সাকিবের পক্ষ নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন তারা। বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, কিংবদন্তির পাশে থাকার কথা। ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (কোয়াব) অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাকিবকে সমর্থন করে গেছে। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের হয়েও কোয়াব সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল চেষ্টা করেছেন সাকিবের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে।
এ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, বিভেদ, বিতর্কের পরও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত সাকিব। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও দেশের ভালোবাসা সঙ্গে থাকবে। অবসর ঘোষণা দেওয়ার পর বিষয়টি আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। এ কারণেই হয়তো বিদায়লগ্নে সতীর্থদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ এবং আন্তরিক তিনি।
গত কয়েক দিন ধরেই সতীর্থদের আড্ডায় সাকিবকে প্রাণবন্ত দেখা গেছে, জানান একজন ক্রিকেটার। তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও ভাবান্তর নেই বাঁহাতি অলরাউন্ডারের। খেলোয়াড়রা জানান, টেস্ট ও টি২০ থেকে পরিকল্পনা করেই বিদায় নিয়েছেন সাকিব। যে কারণে হাসিখুশি সময় পার করছেন তিনি। সঠিক সময়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিলে সতীর্থদের সমর্থন পাওয়া যায়। সাকিব সেটা ভালোভাবে পাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে ধাপে ধাপে শেষের পথে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে জাতীয় দলের ক্যারিয়ার শেষ করবেন। এ সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছেন ৩৭ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার।
জানা গেছে, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা না পেলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট খেলে বিদায় নেওয়া হবে না সাকিবের। বিষয়টি অজানা নয় তাঁর। তাই দেশের মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে। এ কারণেই কানপুর টেস্টের শেষ দিন বিদায়ের একটা আবহ তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ দলের পাশাপাশি স্বাগতিক ভারতের খেলোয়াড়রাও ব্যাটের ছায়ায় গার্ড অব অনার দিতে পারেন বলে টিম ম্যানেজমেন্টের একজন জানান।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার সুযোগ না হলে কানপুরেই শেষ টেস্ট সাকিবের। এর পর দুটি ওয়ানডে সিরিজ ও আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দাড়ি টেনে দেবেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। সাকিব অর্ধেক প্রবাসী ক্রিকেটার ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার পাকাপাকি বসবাসের সময় থেকে। এই সিরিজের পর থেকে সেটা পুরোপুরি হবে। তিনি ভারত থেকে চলে যাবেন নিউইয়র্কে। জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পর্কটা তখন কোনো রকম টিকে থাকবে। কারণ দুটি দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ ও একটি আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলে শেষ করবেন তিনি।
অক্টোবরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ খেলবেন দুবাইয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলবেন অন্য সিরিজটি। বিপিএলে খেলার সুযোগ না হলে বিদেশি লিগে খেলার চেষ্টা করতে হবে তাঁকে। টি২০ এবং টি১০ লিগের বাজার উন্মুক্ত। জাতীয় দলে খেলা না থাকায় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বেশি সময় দিতে পারবেন সাকিব। অবশ্য তাঁর জন্য সমস্যা হতে পারে অনুশীলন করা। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট চর্চা থাকলেও অনুশীলনের সুব্যবস্থা নেই।
সাকিবের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্টি ক্রিকেটে খেলে ফিট থাকার চেষ্টা করবেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। যদিও সাকিব নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি। ২০২৫ সালের মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জাতীয় দলের হয়ে শেষ খেলা খেললেও ক্রিকেটে আরও কিছুদিন থাকতে চান তিনি। তাই পূর্ব-পশ্চিমের বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগই ভরসা তাঁর।