নিজেস্ব প্রতিবেদক:
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত কাজ এখনও শেষ হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত পরীক্ষার জন্য বিদেশের ল্যাবে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ল্যাবের পরীক্ষা রিপোর্ট এখনও দেশে আসেনি।
তবে, ল্যাবের পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেলে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিবে বলে জানিয়েছে অগ্নিকান্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত কাজ শেষ। এখন অপেক্ষা করছি বিদেশের ল্যাবে পাঠানো আলামতের পরীক্ষা রিপোর্ট। সেটা আসার আগে আমরা হাইপো থিসিসের কথা বলেছিলাম। সেই হাইপো থিসিসের সাথে পরীক্ষা রিপোর্ট মিলিয়ে বিষয়টি ‘কনফার্ম অথবা আনকনফার্ম’ করা হবে।
এদিকে, ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ না করেই গতকাল সোমবার সচিবালয়ে ৮ নম্বর ভবনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ফায়ার ফাইটিং মহড়ার আয়োজন করে। মহড়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
মহড়ায় অংশ গ্রহণ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কিছুদিন আগে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আর না ঘটে সেজন্য এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বা ফায়ার এক্সটিনগুইশার সবার বাড়িতে রাখা উচিত। অনেক সময় ফায়ার ব্রিগেড আসার আগেই আগুন অনেক ছড়িয়ে পড়ে। সেজন্য সবার বাসায় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখা উচিত।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কবে জমা দিবে জানতে চাইলে ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, তদন্ত কমিটির সরাসরি ফল হচ্ছে এই অগ্নিমহড়া। এখানে বিল্ডিংগুলো একরকম নয়। সময়ের আবর্তে ৭০/৭৫ বছর ধরে এই ভবনগুলো বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে। এই ভবনগুলো থেকে কার্যক্রম সরিয়ে ফেলতে অনেক সময়ের ব্যাপার। প্রথমত আমাদের সচেতনতা বাড়ানো দরকার। বড় বিল্ডিংয়ের জন্য বিএমএস সিস্টেম তৈরি করা। ফায়ার প্রুফ ডোর তৈরি করা। এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম তৈরি করা। পিডব্লিউডির মাধ্যমে বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা। এগুলোর কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
সচিবালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগে ক্রুটি ছিল কি না এবং সিসি ক্যামেরার বেশিরভাগই অকেজো জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, সিসি ক্যামেরার বেশিরভাগ অকেজো। বিল্ডিংয়ের যে কমন স্পেস রয়েছে সেগুলো পিডব্লিউডি নিয়ন্ত্রণ করবে। বিল্ডিংয়ের এক্সিট ও এন্ট্রি তারা দেখবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদেরটা নিয়ন্ত্রণ করবে। পিডব্লিউডি সচিবালয়ের ভিতরে দিকটা দেখবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কিছু আলাতম পরীক্ষার জন্য বাইরে পাঠানো হয়েছে এবং এই রিপোর্ট পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু আলামত পরীক্ষার জন্য বাইরে পাঠানো হয়েছে। ওই রিপোর্ট এখনও আসেনি। ওইসব আলামতের পরীক্ষা অনেকগুলো স্টেজে করতে হয়। আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বেশ একটা অংশ তৈরি আছে। বাইরে পাঠানো আলামতের পরীক্ষা রিপোর্ট এলে আমরা নিশ্চিত হব যে ‘হাইপো থিসিস’ এর কথা বলেছি। ওই রিপোর্টের সঙ্গে মেলানোর পর আমরা সেটা ‘কনফার্ম অর আনকনফার্ম’ করব। রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।
লুজ কানেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা জিনিসের ভিতরে হিট বেড়ে গেছে। হিটটা বাড়তে বাড়তে সেখানে গলে গেছে। সেখানে ফায়ারের সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ৭৫ বছর ধরে একটা বিল্ডিং তৈরি হয়েছে। দিনের বেলায় ব্যবহার হয় সেই সময় কোনো মিস্ত্রী কাজ করতে পারে না। তাই রাতের বেলায় মিস্ত্রীরা মেরামত করে। যেই সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছিল, ওই সময় হয়তো সেটা যুগোপযোগী ছিল। এখন যেসব সরঞ্জাম লাগানো হয়েছে-সেটা থেকে আগেরটার পার্থক্য ছিল। সেকারণে হয়তো আগেরটা থেকে ফায়ারের সৃষ্টি হতে পারে।