বোলারদের হতাশার দিন

প্রকাশিত: ১২:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৪

ক্রীড়া ডেস্ক:

ব্যাটারদের জন্য চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট বরাবরই স্বর্গ। তার পরও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে সাগরিকায় ফ্রেশ উইকেটে হাসান মাহমুদ সপ্তম ওভারে ব্রেক থ্রুর সুযোগ এনে দেন। কিন্তু অভিষিক্ত উইকেটরক্ষক ব্যাটার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন তা গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি। খানিক বাদে স্পিনার তাইজুল ইসলামের বলে অধিনায়ক ও ওপেনার এইডেন মার্করাম ফিরলেও পরের সময়টা ব্যাট হাতে কর্তৃত্ব করেছে প্রোটিয়া ওপেনার টনি ডি জর্জি ও তিনে নামা ত্রিস্তান স্টাবস। তারা দু’জনই টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ২০১ রানের জুটি গড়েছেন। পরে স্টাবস ফিরলেও চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৮১ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রানের বড় সংগ্রহ তুলেছে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের বিপক্ষে কঠিন দিন গেছে বাংলাদেশের বোলারদের। ওভারের পর ওভার বল করে গেছেন নাহিদ রানা-মেহেদী মিরাজ-তাইজুল ইসলামরা। চার আর রান বাঁচাতে বলের পেছনে ছুটেছেন ফিল্ডাররা। কিন্তু খাটুনির মজুরি পাননি হাতে। স্টেডিয়াম হঠাৎ কুয়াশা দখলে নেওয়ায় আলোস্বল্পতায় মিলেছে ৯ ওভার থাকতে দিন শেষের স্বস্তি।

গতকাল সম্ভাব্য শেষবার টস করতে নামেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। টস পক্ষে না আসায় শুরুতে বোলিং করতে নামে তাঁর দল। ঢাকা টেস্টে হেরে ব্যাকফুটে ছিলেন তারা। উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন কুমার দাসের জ্বর ও জাকের আলীর কনকাশন ইনজুরি আরও ধাক্কা হয়ে আসে। তারা না থাকায় সুযোগ ছিল চট্টলার ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে পাঁচ বোলার নিয়ে খেলার। দক্ষিণ আফ্রিকা সেটাই করেছে। ঢাকা টেস্টের দলে দুই পরিবর্তন এনেছে তারা। ব্যাটার কমিয়ে পেসার ডেন পিটারসনকে একাদশে রেখেছে। ডানহাতি স্পিনার ডিন পিডিটের জায়গায় বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার সেনুরান মুত্তুস্বামীকে সুযোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ এই টেস্টে দুই পেসার নিলেও চিরচেনা চার বোলারের কৌশলে স্থির থাকতে অঙ্কনকে দেশের ১০৬তম টেস্ট ক্যাপ দিয়েছে। সঙ্গে অফফর্মে থাকা ওপেনার জাকির হাসানকে মিডল অর্ডারে খেলানোর পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে একাদশে।
ওই চার বোলারের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাহিদ রানা ভালো করতে পারেননি। ডানহাতি তরুণ পেসার নাহিদ চট্টগ্রামের শুষ্ক উইকেটেও গতির ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। ঘণ্টায় ১৪৬, ১৪৭ কিলোমিটার গতির গোলা ছুড়েছেন ঠিকই, কিন্তু তা উইকেট তুলে নেওয়ার মতো ছিল না। একবার ডি জর্জির বিপরীতে লেগ বিফোরের আবেদন করেন। আম্পায়ারের ডিসিশন রিভিউ করেও মেলেনি সুখবর। তাঁর বাউন্সার ও অফস্টাম্পের বাইরে করা বলে অবশ্য রান নেওয়ার চেষ্টা করেনি প্রোটিয়ারা। যে কারণে কম রান দেওয়ার বিবেচনায় দিনের সেরা বোলার নাহিদ। তিনি ১৩ ওভারে ২.৬০ গড়ে ৩৪ রান খরচ করেছেন। ডানহাতি অফস্পিনার মিরাজ ছিলেন দিনের সবচেয়ে খরুচে বোলার। তিনি জর্জি-স্টাবসকে চাপে রাখতে পারেননি। শেষ সেশনে উইকেটে অল্প টার্ন মিললেও সুবিধা নিতে পারেননি। বরং ২১ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৪.৫০ গড়ে দিয়েছেন ৯৫ রান। অন্য প্রান্তে বাঁ-হাতি তাইজুলকে তাই চাপ নিতে হয়েছে। দিনের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অর্থাৎ ৩০ ওভার বোলিং একাই করেছেন তিনি। দুটি উইকেট নিয়েছেন ১১০ রান দিয়ে। পেসার হাসান ছিলেন বেশ নিয়ন্ত্রিত। শুরুর মতো ৪১তম ওভারে স্লিপে জর্জিকে আউটের দ্বিতীয় সুযোগ এনে দিলেও তা নিতে পারেননি সাদমান ইসলাম। তিনি ১৩ ওভারে ৩.৬০ গড়ে দিয়েছেন ৪৭ রান। ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে মুমিনুলও দিতে পারেননি আশা।

ইনজুরি নিয়ে প্রোটিয়া ওপেনার ডি জর্জি ১৪১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দিন শেষ করেছেন। তাঁর ২১১ বলে খেলা ইনিংস ১০টি চার ও তিনটি ছক্কায় সাজানো। জর্জির সঙ্গে দুই ছক্কায় ১৮ রানে অপরাজিত থাকা ডেভিড বেডিংহাম দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন। স্টাবস ১০৬ করে ফেরার আগে ১৯৮ বল খেলে ৬টি চার ও তিনটি ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন। মার্করাম যোগ করেন ৩৩ রান। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন রাজত্ব করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিনই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে তারা।