ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও অর্থ হাতিয়ে নিতো সিআইডির দুই সদস্যসহ ৫ জন: ডিবি প্রধান

প্রকাশিত: ৮:৪৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:

রাজধানীর কুড়িল এলাকার এক ট্রাভেল ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দুই সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (উত্তর)। ডিবি বলছে, গ্রেফতার সিআইডির দুই সদস্যের নেতৃত্বে রাজধানীজুড়ে দাপিয়ে বেড়াতো একটি অপহরণকারী চক্র। সম্প্রতি এক ভুক্তভোগীর মামলার তদন্তে নেমে এ দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অপহরণ চক্রের সদস্যরা হলেন- এসআই রেজাউল করিম (৩৯), কনস্টেবল আবু সাঈদ (৩২), বরিশালের উজিরপুরের মো. ইমন (২১), একই উপজেলার আব্দুল্লাহ আল ফাহিম (২১) ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার শরীফ হোসেন (২৬)। ফাহিম ও ইমনকে গত ৩ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়। বাকি তিনজনকে গতকাল ২৪ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়। আজ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাজ হলো তদন্ত করা। যখন থানায় কোনো মামলা হয় তখন সেই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করা বা ছায়াতদন্ত করা হয়। ভাটারা থানায় চলতি বছরের আগস্ট মাসে এক ট্রাভেল ব্যবসায়ী ভুক্তভোগী হিসেবে থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডি পরিচয় দিয়ে ফোন করে ধরে নিয়ে টাকা-পয়সা আদায় শেষে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখে যাওয়া হতো। এসব অভিযোগে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (উত্তর) তদন্তে নামে।

তদন্তের এক পর্যায়ে বরিশাল থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে অপহরণ ও টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করেন। এ সময়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, চক্রে একজন পরিদর্শক ও আরেকজন এসআই পদের দুই পুলিশ সদস্যও জড়িত। যদিও এ পরিচয় সঠিক নয়। যিনি নিজেকে পরিদর্শক রবিউল পরিচয় দিয়েছেন তিনি আসলে একজন কনস্টেবল। তারা নিজেদের ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে টাকা-পয়সা আদায় করতেন। সিআইডিতে কর্মরত দুই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে অপহরণ চক্রের সদস্যরাও জড়িত।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, দুজনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর অপহরণ ও ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ফোনের লিস্ট ও লোকেশন ট্রাকিং করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় নেবে না। যেহেতু আমরা অপরাধীকে গ্রেফতার করি। সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য যদি অপহরণকারীর সঙ্গে মিশে অপরাধ করে তখন তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অতীতেও ছাড় দেইনি, ভবিষ্যতেও কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যে দুজন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতরা করা হয়েছে আমরা তাদের রিমান্ডে আনবো। তাদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হবে আর কেউ জাড়িত আছে কি না। অথবা বর্তমান ও সাবেক কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত আছে কি না আমরা জানার চেষ্টা করবো।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, বিভিন্ন সময় ভুয়া পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি সদস্য গ্রেফতার করেছি। এবারও আমরা সিআইডি পরিচয় দেওয়া অপহরণকারী চক্র ধরতে গিয়ে আসল সিআইডি গ্রেফতার করেছি। প্রতিবছর পুলিশ বাহিনীতে খারাপ কর্মকাণ্ডের কারণে যে পরিমাণ শাস্তি পায় অন্য কেনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে পায় না। একদিকে পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেমন মানবিক অন্যদিকে এসব বিষয়ে অমানবিক ও কঠোর। কারণ সাধারণ মানুষকে পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো অপরাধ করবে এটা পুলিশ বাহিনী বরদাস্ত করবে না।

কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান হারুন।