ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই দেশে শুরু হতে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ!
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের নাম ‘করোনা ভাইরাস’। ঝুঁকিতে থাকলেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই দেশে শুরু হতে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ২০১৯ সালে দেশে রেকর্ড সংখ্যক এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এবারও বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া বদলাচ্ছে, বৃষ্টি হলে প্রকোপ বাড়বে। তাই এখন থেকেই মশা নিধন কার্যক্রম চালানোর কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। না হলে গতবারের চেয়েও পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৬ জন। ছাড়পত্র নিয়েছেন ২৩৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন একজন। ভর্তি হওয়া ২৩৬ জনের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুইজন করে। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার জন, বিজিবি হাসপাতালে তিন জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। অপরদিকে, ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৪৯ জন। রাজধানী ঢাকা ছাড়া ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা আর রংপুর বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন ডেঙ্গু রোগী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন থেকেই মশা নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। শুধু রাজধানী নয়, ঢাকার বাইরেও কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরুর পর কার্যক্রম হাতে নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া বদলাচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে মশার প্রকোপ বাড়বে। ডেঙ্গু কিন্তু আবার আসবে। এখন থেকেই মশা নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরুর পর কার্যক্রম হাতে নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। গত মৌসুমে দেখা গেছে যারা দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, তারা বেশি ভুগেছেন। আর এবার যদি গতবার আক্রান্ত হওয়া রোগী ফের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই এখনই মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করতে হবে। প্রয়োজনে সারাবছর সেটা চলমান রাখতে হবে।’
গতবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অবস্থান নির্ণয় নিয়ে ম্যাপ তৈরি করে কাজ করেছিলেন আইসিডিডিআরবি-এর সাবেক গবেষক আতিক আহসান। চলতি বছরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কেমন হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের এপ্রিল থেকে গতবছরের চেয়েও বাড়বে বলেই জানতাম। কারণ এটা জিওম্যাট্রিক্যালি বাড়তে থাকে। বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুর প্যাটার্ন লক্ষ করলেই এটা বোঝা যায়। এক বছরের চেয়ে তার পরের বছরে ক্রমাগতভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সে হিসেবে একই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে গতবছরের চেয়ে এ বছরে রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এটা খুবই কমন হিসাব-সহজ অংক।’
আতিক আহসান বলেন, ‘চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কমিয়ে রাখতে সরকারকে এখন থেকেই কাজ করতে হবে। তাই সিটি করপোরেশনকে খেয়াল রাখতে হবে, গতবছর মশা মারার ওষুধ নিয়ে যা হয়েছে, এবারে যেন তেমনটা না হয়। নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রমের ওপর ফোকাস রাখলে গতবারের মতো অবস্থা হবে না।’
গতবছরের মতো এবারও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এপিডেমিওক্যালি খুব একটা নেই। তবে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কীভাবে করা হচ্ছে—তার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে ডেঙ্গু কেবল শহরে হতো। কিন্তু গতবার গ্রামেও ছড়িয়েছে। এখন যেহেতু ইনফেকশন গ্রামে চলে গেছে, তাই মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম যদি গ্রাম পর্যন্ত না যায়, তাহলে কিন্তু সেটা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। তাই গ্রাম এলাকাতেও আমাদের খুব জোর দেওয়া দরকার।’
সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন অন্য সময় মশা নিধন কার্যক্রম এপ্রিলে শুরু করতো। চলতি বছরে সেটা জানুয়ারি থেকেই শুরু করেছে। এটা আশার কথা।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘মশা বাড়ছে এটা সত্যি। আশা করবো এখন থেকেই মশা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেবে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলো।’ এখন থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এ বছর ডেঙ