মন খারাপের কিছু নেই, কাজ করতে পারলে করবো, অপারগ হলে চলে যাবো

উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত

প্রকাশিত: ২:২৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৭, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট :

অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে আগের ১৭ জনের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন আরও চার জন। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) নতুন এই উপদেষ্টারা শপথ নেওয়ার পর কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পুনঃবণ্টন করা হয়। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানানো প্রতিক্রিয়ায় এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘এতে মন খারাপের কিছু নেই।’

ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। এসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমার যতটুকু করার সাধ্য ছিল, করে আসছি।’

নতুন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা প্রসঙ্গে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখন যেখানে দিয়েছে, সেখানে কাজ করতে পারলে করবো, আর অপারগ হলে চলে যাবো।’

এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হওয়ার পর গত ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন। ওইদিন আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়া আওয়ামী লীগকে গণ্ডগোল না পাকিয়ে নতুন মুখ নিয়ে দল গোছানো পরামর্শ দেন তিনি।

দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা অনেক বড় পার্টি। আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। একসময় বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। বায়ান্ন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদান ব্যক্তিগত কোনও কারণে নষ্ট করবেন না। এটা জাতীয় সম্পদ। আপনারা আসুন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বলবো, এমন কিছু করবেন না যাতে জীবন বিপন্ন হয়। আপনারা রাজনৈতিক দল হিসেবে দলকে গুছিয়ে নিন। নির্বাচন হলে অংশ নিন। জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন। তবে প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখলে হাজার-হাজার মানুষের রক্ত ঝরবে।’

সেইসঙ্গে ভারতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেছিলেন, ‘আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গণ্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, এতে লাভ হবে না। বরং লোকজন আরও ক্ষেপে উঠবে।’

ওইদিন তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আজকের উপদেষ্টার কেউ-কেউ খুনিদের পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিচ্ছেন। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের বক্তব্য যারা দিতে চায়, আমরা ছাত্র-জনতা যেভাবে তাদেরকে উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করবো না।’

ওই রাতে এম সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ করেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার মায়ের মতো পরিণতি ভোগ করার হুমকি দিচ্ছে সেই ‘একই জনতা’।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে শেখ হাসিনার সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের একটি বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করতে বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘সেই একই ‘‘জনতা’’ কোনোভাবেই তার সৎ পরামর্শ মেনে নিতে পারেনি, উল্টো তারা (জনতা) আমার মায়ের মতো একই পরিণতি ভোগ করার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে হুমকি দিয়েছে।’

এসব ঘটনার পর চাপে পড়েন সাখাওয়াত হোসেন। তাকে উপদেষ্টা থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন উঠে। ধারণা করা হচ্ছে, এসবের জেরে শুক্রবার তাকে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। খবর: ভয়েস অব আমেরিকা