মাঝপথে মঞ্চ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ:শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতিক্রিয়া
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
বিনোদন ডেস্ক:
গত শনিবার রাজধানীতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় একদল ব্যক্তির বিক্ষোভের মুখে দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করতে বাধ্য হন একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়ে শিল্পকলা একাডেমি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেছেন, বিকেল থেকে নাটকের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু পরে বিক্ষোভকারীরা আবার সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
ঘটনার শুরু যেভাবে
গত ১৭ অক্টোবর নাট্যদল ‘দেশ নাটকের’ এহসানুল আজিজ বাবু তাঁর ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে লেখেন, আসুন, আমরা সবাই এ দেশকে বাঁচাই, জয় বাংলা বলে এ বাংলাদেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।’ এই পোস্টের সঙ্গে একটি ছবিও শেয়ার করেন তিনি, যেখানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের ছবি ‘এডিট করে জিন্নাহ টুপি পরানো হয়েছে’ এবং তাদের ‘রাজাকার’ আখ্যায়িত করা হয়েছে। ওই পোস্ট ঘিরেই কিছু মানুষ জাতীয় নাট্যশালার সামনে আসেন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত কয়েকজন নাট্যব্যক্তি।
শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ার এ ঘটনায় নাট্যাঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নাট্যাভিনেতা বলেন, ‘তিনি শিল্পকলার মহাপরিচালক, কিন্তু তাঁর প্রধান পরিচয়– তিনি মঞ্চের পণ্ডিত। নির্দেশক। শিল্পী। যে কোনো পরিস্থিতিতে তিনি ‘শো মাস্ট গো অন’ বলতে পারার সক্ষমতা রাখেন। অন্তত এমন ব্যক্তিত্ববানই তো উনাকে ভাবেন সবাই! নিত্যপুরাণের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ নাটকের শো বন্ধ করতে বললেন। বলা হচ্ছে, বাধ্য হইলেন। টানলেন ‘উত্তেজিত জনতা’র অজুহাত! এটা মানতে পারছি না।’
অভিনেত্রী ও নির্দেশক নুনা আফরোজ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, দেশের সম্পদ রক্ষা করা দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব, তারপর যদি আবার হয় শিল্পের সম্পদ একজন শিল্পের মানুষ হিসেবে সেটা রক্ষা করাও পরম দায়িত্ব। শিল্পকলার মহাপরিচালক জামিল আহমেদ ভাই সেই দায়িত্বটি পালন করেছেন। কিন্তু এ ঘটনার দায় তিনি এড়াতেও পারেন না এটাও সত্য, সে কারণেই এমন ঘটনা যেন আর না ঘটতে পারে সেই পদক্ষেপ তাঁকে দ্রুত নিতে হবে। সুষ্ঠু তদন্ত করে চিহ্নিত করতে হবে, এ ঘটনার নেপথ্যে কারিগর কারা এবং করণীয় ব্যবস্থা নিতে হয়।
অভিনেতা জুলফিকার চঞ্চল বলেন, শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক বন্ধ করে দেওয়া হলো। একজন নাট্যকর্মী হিসেবে এটা লজ্জা। কোনো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির জন্য একটা নাটক বন্ধ হতে পারে না। ঠিক একইভাবে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি) ও তীরন্দাজ’র বাহাজ ও নাটক বন্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ দলদাসরা। ভালো লাগেনি একজন নাট্যকর্মী হিসেবে। আজও ভালো লাগেনি নাটক বন্ধ করাতে। নাটক বন্ধ করে অযৌক্তিক, হাস্যকর, মেরুদণ্ডহীনতার প্রকাশ, বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং ঘৃণ্য অপরাধ। তীব্র প্রতিবাদ জানাই।