সেলিনা আক্তার:
ডিসেম্বরেই বাণিজ্যিক উৎপাদন বা কর্মাশিয়াল অপারেশন ডেট (সিওডি) ঘোষণা করতে যাচ্ছে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পরীক্ষামূলক উৎপাদনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ক্রমেই কেন্দ্রটির উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত দেশে কয়লাচালিত বড় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এর মধ্যে পায়রার দুটি ইউনিটই বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। রামপালে একটি ইউনিট চলছে। অন্যটি চলছে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে। এছাড়া কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ১২০০ মেগাওয়াটের মধ্যে প্রথম ইউনিট ৬০০ মেগাওয়াট পরীক্ষামূলক উৎপাদনে এসেছে।
কারিগরি দিক দিয়ে জাপানের নির্মাণ করা কেন্দ্রটি অন্য যে কোনও কেন্দ্রের চেয়ে ভালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, জাপানের প্রযুক্তি বিশ্বমানের। কাজেই জাপানের নির্মাণের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। কিন্তু অন্য যারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে এবং বিনিয়োগ করেছে আমরা তাদেরও খাটো করে দেখতে চাই না।
পিডিবি সূত্র বলছে, এই কেন্দ্রটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি’র (জাইকা) অর্থায়নে নির্মাণ করা হলেও কেন্দ্রটির শতভাগ মালিকানা রয়েছে সরকারের হাতে। পিডিবির প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। এই কেন্দ্রের সঙ্গে কয়লা আনার জন্য একটি চ্যানেল খনন করা হয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে ৫০ হাজার টনের জাহাজ কয়লা নিয়ে আসতে পারবে। দেশের অন্য যেসব কয়লাচালিত কেন্দ্র রয়েছে তারাও এখানে মাদার ভ্যাসেলে করে কয়লা নিয়ে আসতে পারে। এতে আর্থিক সাশ্রয়ের সঙ্গে এই কেন্দ্রটির আয় বাড়বে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্র বলছে, কেন্দ্রটি গত ৮ অক্টোবর ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৯ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। প্রথম ইউনিট কোনও কোনও ঘণ্টায় ৩৫৮ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।
গত ৩১ জুলাই থেকে কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। কোনও একটি কেন্দ্র পরীক্ষামূলক উপাদন শুরু করলে কেন্দ্রটি কয়েক মাস চালিয়ে দেখা হয়। এইসময় কেন্দ্রটির কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না তা দেখা হয়। মাতার বাড়ি কেন্দ্রটির ক্ষেত্রেও এখন সেই কাজটি করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রটির উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর দিন নির্ধারণ করলে পিডিবি গঠিত কমিটি কেন্দ্রটি টানা ৭২ ঘণ্টা ফুল লোডে চালিয়ে দেখবে। যদি কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারে তাহলেই কেন্দ্রটিকে বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়া হবে। যদি কেন্দ্রটি ফুল লোডে না চলতে পারে সেক্ষেত্রে টানা ৭২ ঘণ্টায় যে সর্বোচ্চ লোডে চলতে পারে, অর্থাৎ সর্বোচ্চ যে পরিমাণ উৎপাদন করতে পারবে সেটিকেই কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা বিবেচনা করা হবে।
অর্থাৎ এখানে ৬০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি যদি টানা ৭২ ঘণ্টা ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পারে তাহলে এই পরিমাণকেই কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হবে। কিন্তু কোনও কারণে ৬০০ মেগাওয়াটের কম উৎপাদন করতে সক্ষম হলে ওই পরিমাণকেই কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা বিবেচনা করা হবে।
সরকারের মালিকানাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১১ সালে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড গঠন করা হয়। দেশের বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে প্রাধান্য দিয়ে জাপান সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোম্পানিটি আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, আমরা বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দ্রুত উৎপাদনে আনার চেষ্টা করছি। যাতে করে একটা বড় জায়গা থেকে চাহিদার অনেকখানি বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাজকেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। এ কারণে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।