মানবতাবিরোধী অপরাধ: যশোরের আমজাদ মোল্লাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে রায় ২৫ জুন

প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় যশোরের আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ চারজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা ২৫ জুন। আজ বুধবার (২১ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। এই মামলার আসামিরা হলেন মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা, মো. ওহাব মোল্লা, মো.মাহতাব বিশ্বাস, মো. ফসিয়ার রহমান মোল্লা ও মো. নওশের বিশ্বাস। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, মো. সাহিদুর রহমান ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আর আসামি পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। এর আগে চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে ১১ মে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আটক, নির্যাতন, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু হয় এবং ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল শেষ হয়।
২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে অন্য মামলায় গ্রেফতার থাকা আমজাদ হোসেন মোল্লাকে ২০১৭ সালের ২২ মে হাজিরের পর থেকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। আর বাকি চারজন ছিলেন পলাতক। এরমধ্যে আবার নওশের বিশ্বাস মারা যান। ফলে এখন আসামি চারজন। আমজাদ মোল্লা যশোর বাঘারপাড়া থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আটক, নির্যাতন, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন আমজাদ মোল্লা। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু হয়ে ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল শেষ হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ হলো:

অভিযোগ-১. ১৯৭১ সালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাঘারপাড়া থানার উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মো. ময়েনউদ্দিন ওরফে ময়নাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা। সেখানে তিনদিন আটকে রেখে নির্যাতন করে ৬ ভাদ্র দুপুর ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে ময়নাকে গুলি করে হত্যা করেন মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা।
অভিযোগ-২. ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই দুপুর ১টার দিকে আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা বাঘারপাড়া খাজুরা বাজার থেকে ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরদিন দুপুর ১২টায় তাকে থানা সদরের মহিরাম গ্রামের মাঠে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-৩. ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৮-৯টায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী সুরত আলী বিশ্বাস, মোক্তার বিশ্বাসকে তাদের বাড়ি থেকে ধরে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন নির্যাতন করা হয়। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে তাদের কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেন আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা।

অভিযোগ-৪. মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের পার করে দেওয়ার কারণে মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালী বাজার ঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ধরে নিয়ে যান। পরে প্রেমচারা গ্রামের চিনারাশি আম বাগানে নিয়ে রজব আলী বিশ্বাসকে গলা কেটে হত্যা করেন তারা।