মারা গেলেন সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত ভূবন

প্রকাশিত: ৬:০১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত মোটরসাইকেল আরোহী ভূবন চন্দ্র শীল (৫২) অবশেষে মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ তার লাশ মর্গে পাঠিয়েছে। আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে নিউজ পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের শ্যালক পলাশ চন্দ্র শীল।
তিনি জানান, আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে পুলিশ এসে আইনি প্রক্রিয়ায় সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ মর্গে নিয়ে গেছে।
পলাশ চন্দ্র শীল জানান, ভূবনের স্ত্রী রত্না রানী শীল তার একমাত্র মেয়ে ভূমিকা চন্দ্র শীল ও দুই ভাইকে নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে ওই হাসপাতালে স্বামীর সুস্থ হয়ে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুণছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাষ সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে টানা এক সপ্তাহ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থেকেও অবশেষে তাকে না ফেরার দেশে পাড়ি দিতে হলো।

তিনি আরও জানান, চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ৯টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা ভূবনের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার চলে। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে কি না, তা ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর জানানো হবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তবে ঝুঁকি থাকায় অস্ত্রোপচার করা হলেও মাথা থেকে গুলি বের করা হয়নি। গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে ভুবনের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে।


স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে ভূবন চন্দ্র শীলের সংসার। গোমতী টেক্সটাাইল লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন ভূবন। রাজধানীর গুলশানে তার অফিস। ঘটনার রাতে কাজ শেষে অফিস থেকে মতিঝিলের আরামবাগের বাসায় ফেরার পথে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিজি প্রেস এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে গুলিবদ্ধ হন তিনি।
ভুবন শীল আরামবাগের বাসায় একাই থাকতেন। তার স্ত্রী রত্না একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকেন নোয়াখালীর মাইজদীতে। রত্না মাইজদীর একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের মেয়ে ভূমিকা চন্দ্র শীল সদ্য এসএসসি পাস করেছে।


সন্ত্রাসী ওই হামলার পর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে মগবাজার এলাকার প্রেয়সী বার থেকে বেরিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন একটি প্রাইভেটকারে করে শুক্রাবাদের তল্লাবাগের বাসায় ফিরছিলেন। তখন শিল্পাঞ্চল থানাধীন সিটি পেট্রোল পাম্প এবং বিজি প্রেসের মাঝামাঝি রাস্তায় পৌঁছালে ৪টি মোটরসাইকেলে ৭/৮ জন সন্ত্রাসী মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং পিঠে ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী ভূবন চন্দ্র শীলের মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া পথচারী আরিফুল হক ইমন সামান্য আহত হন। গুরুতর আহত ভূবনসহ তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মধ্যরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে সেখান থেকে স্বজনরা তাদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।
জানা যায়, সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত মামুনও শীর্ষ সন্ত্রসী। দীর্ঘ ২৬ বছর পর গত ২-৩ মাস আগে জেল থেকে বের হয়েছেন। তার বাবার নাম এসএম ইকবাল। বাড়ি ল²ীপুর সদর উপজেলার শমসেরাবাদ গ্রামে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিজি প্রেস এলাকায় প্রাইভেটকার আরোহী এক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় একদল সন্ত্রাসী। লক্ষ্যভ্রষ্ট সেই গুলি লাগে মোটরসাইকেল আরোহী ভূবন চন্দ্র শীলের মাথায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওই রাতেই তাকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।