মুন্সিগঞ্জে পিকনিকের ট্রলারডুবিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮, নিখোঁজ ৬

প্রকাশিত: ৪:২৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৬, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের ট্রলারডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। ট্রলারটিতে ৪৬ জন যাত্রী ছিল। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৩২ জনকে। বাকি ৬ জন এখনও নিখোঁজ বলে জানা গেছে। শনিবার (৫ আগস্ট) দিবাগত মধ্যরাতে নিউজ পোস্টেকে এই তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক।

তিনি জানান, শনিবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রলারটিতে ৪৬ জন যাত্রী ছিল। এরমধ্যে ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা রাফি আল ফারুক বলেন, এ ঘটনায় প্রথমে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। পরে আরও দুই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।

পুলিশ-ফায়ারসার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্ট থেকে ডহুরীর খাল দিয়ে  সিরাজদিখান এর দিকে যাচ্ছিলো পিকনিকের ট্রলারটি। রাত আটটার দিকে খিদিরপাড়া ইউনিয়নের রসকাটি এলাকায় পৌঁছালে অন্ধকারেত একটি বালুবাহী বাল্কহেড ট্রলারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীসহ ডুবে যায় ট্রলারটি। এর আগে সিরাজদিখান এলাকা থেকে ভাড়া করা একটি ট্রলার নিয়ে মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীতে পিকনিক করতে যায় অন্তত ৫০ জন। পিকনিক শেষে রাতে ফেরার পথে ট্রলারটি এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও অনেকেই  নিখোঁজ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। রাতের প্রথমদফায় উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ৬ জন, পরে একঘন্টার ব্যবধানে আরও দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

আরএমও নূরে আলম নিউজ পোস্টকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে দুইটি বাচ্চার মরদেহ আনা হয়। একজনের বয়স আট বছর, নাম রায়হান। অপরজনের বয়স পাঁচ মাস।

স্থানীয় খিদিরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম নিশ্চিত করে নিউজ পোস্টকে বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত ওই ট্রলারটি সিরাজদিখান উপজেলা থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন উপজেলার লুতব্দি ও খিদিরপাড়া ইউনিয়নের পারিবারিক দল। ঘটনাস্থলে এক নারীর মরদেহ রয়েছে। তিনি তিন সন্তানের জননী বলে জানা গেছে।

এদিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোকসেদা (৩০) নামের এক নারীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। মোকসেদা সিরাজদিখান উপজেলার লুতব্দি এলাকার বাসিন্দা বলে নিউজ পোস্টকে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনজুমান আরা।

ঢাকা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার্সের স্টেশন মাস্টার মেহেদী হাসান রাত সাড়ে ১১টায় জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত আটটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান রয়েছে।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস চারজনের লাশ উদ্ধার করেছে। এর আগে স্থানীয় লোকজন আরো চারজনের লাশ উদ্ধার করে। তাদের মধ্যে নারী তিনজন, শিশু তিনজন। এখনো আরো নিখোঁজ চার থেকে ছয়জনের সন্ধানে তৎপর রয়েছেন ডুবুরিরা। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাছাড়া নিখোঁজদের সন্ধানে নদীতে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। খবর পেয়ে হতাহতের খোঁজে স্বজনরা টর্চ ও চার্জার লাইটের আলো জ্বালিয়ে খালের দুইপাড়ে ভীড় করছেন। অনেকেই বুক চাপড়ে বিলাপ করছেন। গভীর রাতেও স্বজনহারাদের আহাজারিতে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর রিপন বলেন, মর্মান্তিক এ ঘটনায় আমরা ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এই কমিটির আহ্বায়ক। এই কমিটি ৩ কর্মদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবে।

প্রসঙ্গত, এই খাল দিয়ে গত বর্ষায় লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করেছিলেন। এমনকি বেপরোয়া এই বাল্কহেড চলাচল বন্ধে বালিগাঁও বাজারের কাছে আড়াআড়ি বাঁশ বেঁধে বাল্কহেড চলাচল রোধ করা হয়েছিল। তাছাড়া রাতে বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এই খালে কোনোমতেই এসব বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না।