মোটরযানের গতিসীমা সড়কে প্রতিরোধযোগ্য রোডক্র্যাশ-অকাল মৃত্যু কমাবে

প্রকাশিত: ৩:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৪

মোঃ সাইফুল ইসলামঃ 

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ‘মোটরযানের গতিসীমা নির্দেশিকা, ২০২৪’ প্রণয়ন করেছে। জারি করা মোটরযানের গতিসীমা নির্দেশিকা রোডক্র্যাশ ও প্রতিরোধযোগ্য অকাল মৃত্যু ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ।একইসঙ্গে এ নির্দেশিকার যথাযথ বাস্তবায়ন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও সেকেন্ড ডিকেইড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে সংগঠনটি।বুধবার (১৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মোটরযান গতিসীমা নিয়ে রোড সেইফটি কোয়ালিশনের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কোয়ালিশনের পক্ষে নিরাপদ সড়ক চাই (নিশচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখছে। এরপরও রোডক্র্যাশ বাড়ছে, একইসঙ্গে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো। পাশাপাশি মোটরসাইকেলের অনিয়ন্ত্রিত গতি প্রতিনিয়ত দেশের কর্মক্ষম তরুণসহ অনেকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এ অবস্থায় রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের অন্য দেশগুলো থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সড়কে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি নির্দেশনার দাবি করে আসছিল। মোটরযানের গতিসীমা নির্দেশিকা জারি করায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, কোয়ালিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এই নির্দেশিকাটি বাস্তবায়ন করা গেলে পরিবেশের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমে আসবে, প্রতিরোধযোগ্য রোডক্র্যাশ ও সড়কে অকাল মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ব্যক্তি ও সরকারের চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস পাবে, তথা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে এই নির্দেশিকার বাস্তবায়ন সড়কে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ ঝুঁকিপূর্ণ পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা, ২০২২ এ গতিসীমার কথা উল্লেখ থাকলেও এই নির্দেশিকার মাধ্যমে দেশের জন্য প্রথমবারের মতো প্রতিটি সড়কে মোটরযানের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারিত হলো। বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক মোটরযানের গতিসীমা নির্ধারণ করায় রোডক্র্যাশ কমবে। এতে মানুষের জীবন বাঁচবে ও পঙ্গুত্ব হওয়া, হওয়ার হার কমবে, হাসপাতালগুলোতে রোডক্র্যাশ রোগীর সংখ্যাও কমে আসবে। কমগতি সম্পন্ন মোটরযানের চালক সামনে সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহারকারীদের সহজে দেখতে পারবেন এবং এতে তিনি তার মোটরযানের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। ফলে রোডক্র্যাশের সংখ্যা যেমন কমবে সেইসঙ্গে হতাহতের সংখ্যাও কমবে।

তিনি আরও বলেন, শহর এলাকার জন্য এই প্রথম গতিসীমা নির্ধারিত হলো। অর্থাৎ শহর এলাকাকে গুরুত্ব দিয়ে গতিসীমা নির্ধারণ করা, যা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বের অনেক দেশের শহর এলাকায় নির্ধারিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের বক্তব্য হচ্ছে, ঘনবসতি সম্পন্ন গ্রামাঞ্চল ও শহরের জন্য মোটরসাইকেলের গতিসীমা নির্ধারণ করায় সড়কে চলাচল করা শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা উপকৃত হবেন। বিশ্বের অনেক দেশ শহরাঞ্চলের রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কম গতিসীমা নির্ধারণ করেছে।

এসময় আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, অতি সত্তর ‘মোটরযানের গতিসীমা নির্দেশিকা, ২০২৪’ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, বিভাগে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা ও পদক্ষেপ গ্রহণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করার সুপারিশ করছে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ।

পাশাপাশি এই নির্দেশিকাতে যেসব বিষয় যেমন– কীভাবে বিভিন্ন গতির মোটরযানগুলো ওভারটেক করবে; লেন পরিবর্তন কীভাবে হবে; সড়কে কবে থেকে নির্দেশিকা কীভাবে, কখন ও কোথায় প্রয়োগ হবে, তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। নিয়মিতভাবে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে একটি সমন্বয় সভার মাধ্যমে রোডক্র্যাশের সংখ্যা ও কারণ বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রদান করার সুপারিশও করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ সড়ক চাই (নিশচা) মহাসচিব লিটন এরশাদসহ কোয়ালিশনের সদস্য ব্র্যাক, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সিআইপিআরবি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, অর্থোপেডিক সোসাইটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বিএনএনআরসি, স্টেপ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।