মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশেও ভয়ংকর প্রতারক চক্র: গ্রেফতার ৭
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশেও ভয়ংকর প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে। চক্রটি নানা কৌশল বিভিন্ন গ্রাহককে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। চক্রটি বিভিন্ন বাসা বাড়িতে প্রবেশ করে নিজেদের কখনো টিসিবির কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দিয়ে সংগ্রহ করছে জীবন বৃত্তান্তের সকল তথ্য। এরপর একজনের তথ্য দিয়ে অন্যজনের সিম ব্যবহার করত চক্রটি। পরে নিজেদের পদস্থ কর্মকর্তা সাজিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকার ফাঁদে ফেলে রাজধানী ঢাকা শহর দেশের বিভিন্ন শহরে ভয়ংকর প্রতারক চক্র গড়ে তোলে। এমনই একটি ভয়ঙ্কর প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছি পুলিশ। তারা একজনের তথ্য দিয়ে অন্যজনের নামে সিম কিনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নগদ ও বিকাশ আ্যকাউন্ট খোলে। পরে সেই নম্বর থেকে জিনের বাদশাহ, বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও বিকাশ-নগদ কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা করে। এ চক্রের সক্রিয় সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা একটি মামলা তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর এ চক্রের নাম। গ্রেফতাররা হলেন- অনিক (২২), মো. রবিউল হোসেন (২৫), সাব্বির করিম আহাম্মেদ (৩৭), জোবায়ের আলম (৩৬), মোক্তার হোসেন (২৫), অন্তু দে (২২) ও ফজলুল করিম নাহিদ (৩৪)। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আজ সোমবার (২১ আগস্ট) বিকেলে নিউজ পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছেন মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে ভয়ংকর প্রতারক চক্রে সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির ২১৪টি সিম, একটি ল্যাপটপ, ৮টি স্মার্টফোন, দুটি ট্যাব, ৫টি বাটন ফোন, ‘নগদ পকেট ডাক্তার’ সংবলিত ডিসকাউন্ট কার্ড ৫০০টি, ‘গ্রিন বাংলা আরকেআর’ লেখা সংবলিত কার্ড হ্যাঙ্গার, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, স্যালারি শিট, বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার ভুয়া সিল, ভুয়া পুলিশ কার্ড, ভুয়া সাংবাদিক কার্ড, নগদ ডাকবিভাগের ডিজিটাল লেনদেনের কার্ড ও বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মূলত প্রতারক চক্রটি তিন ধাপে ভয়ঙ্কর প্রতারণার কাজ করতো। প্রতিটি ধাপেই আলাদা আলাদা গ্রুপ কাজ করে। প্রথম ধাপে প্রথম গ্রুপ বিভিন্নজনের জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে। এ গ্রুপ তাদের এসব তথ্য দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়। দ্বিতীয় ধাপে এ গ্রুপ এসব তথ্য দিয়ে এসব নামে সিম কিনে এবং বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট খোলে। এরপর এসব সিম তারা উচ্চমূল্যে বিক্রি করে দেয় তৃতীয় গ্রুপের কাছে। তারা এসব সিম ব্যবহার করে কখনো জিনের বাদশাহ, কখনো বিকাশ বা নগদ এজেন্ট, আবার কখনো বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা সেজে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে।
মিরপুর মডেল থানার ওসি বলেন, ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণার। সেই মামলা তদন্তে গিয়ে আটক করা হয় অরুণাকে। কিন্তু অরুণা জানান, তার কোনো মোবাইলই নেই, তিনি কোনো মোবাইলই ব্যবহার করেন না। তাই তার কাছে কোনো সিমও নেই। কোনো বিকাশ কিংবা নগদ আ্যকাউন্টও নেই তার। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিশ্চিত হওয়া যায়, এ ঘটনার সঙ্গে অরুণার যোগসাজশ নেই। কারণ, অরুণা ঢাকায় থাকলেও সেই সিমের অবস্থান রাজশাহীতে। পরে অরুণাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সরকার স্বল্পমূল্যে চাল, ডাল, তেল দেবে বলে কিছুদিন আগে তাদের বাসায় কয়েকজন লোক আসে। তারা এজন্য তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, আইরিস (চোখের ছাপ) ও আঙুলের ছাপ নিয়ে যায়। কিন্তু এরপর তারা আর আসেননি। মূলত স্বল্পমূল্যে চাল, তেল দেওয়ার নাম করে তাদের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল গ্রুপটি। তাদের যাতে মানুষ সন্দেহ না করে এজন্য তারা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বাসায় আটার প্যাকেট, তেলের বোতলও সঙ্গে নিয়ে যেতো। সবাই প্রতিষ্ঠানের লোগো সম্বলিত একই ধরনের টি-শার্টও পরতো।
প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত মোবাইল ব্যাংকিং কর্মকর্তাও
ভয়ঙ্কর এ প্রতারক চক্রের চার সদস্য চাকরি করেন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশে। গ্রেফতার জোবায়ের ও সাব্বির বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস সুপারভাইজার (ডিএসএস) এবং মোক্তার হোসেন ও অন্তু দে ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার (ডিএসও)। তারা তাদের কাছে থাকা পাসওয়ার্ড এজেন্টের কাছে দিয়ে দেন। ফলে এজেন্ট সহজেই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানের বেঁধে দেওয়া মাসিক টার্গেট পূরণের জন্যই তারা এভাবে এ প্রতারক চক্রকে ‘সহযোগিতা’ করেছেন।
ওসি বলেন, সাধারণত একটি সিমের দাম ৫০ টাকা। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু সিম ১০০ টাকায়ও বিক্রি হয়। কিন্তু এ প্রতারক চক্রের সিমের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তারা যেসব সিম প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে অন্য প্রতারক চক্রের কাছে। যেহেতু এসব প্রতারকচক্র জিনের বাদশাহ, বিকাশ ও নগদ প্রতারণাসহ অন্যান্য প্রতারণার কাজে এসব সিম ব্যবহার করে তাই তাদের কাছে এসব সিমের খুব চাহিদা। এসব সিম তারা এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে কিনেন।
তারা কখনো জিনের বাদশাহ, কখনো পুলিশের এসপি
ওসি মহসীন বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত এসব সিম দিয়ে অনিকরা বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা কখনো জিনের বাদশাহ সেজে ফোন দেয়। কখনো পুলিশের এসপি সেজে মামলা থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়। আবার কখনো বিকাশ কিংবা নগদের কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা করে আসছিল।