লাইফস্টাইল ডেস্ক :
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে ড্রাই ফ্রুটস সকলের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরেই থাকে। তবে মাত্রাতিরিক্ত কোনোকিছুই ভালো নয়। ড্রাই ফ্রুটস দিনে ৩০ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয় বলেই অভিমত অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের। ড্রাই ফ্রুটস তাজা ফল থেকে তৈরি করা হয় ঠিকই তবে সেগুলোকে ড্রাই ফ্রুটসে পরিণত করায় ফলের পানির পরিমাণ কমে যায় অনেকটাই। আর এভাবেই ক্যালরি যায় বেড়ে।
কাঠবাদাম আর কাজুবাদামের প্রতি আউন্সে ১৬০ ক্যালরি থাকে। ‘চিয়া বীজ’ বা ‘ম্যাকাডেমিয়া’ বাদামেও অনেক ক্যালরি। বাদাম, কাজু ও আখরোটে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও প্রয়োজনীয় ভিটামিনও রয়েছে। কিছু বাদামে সেলেনিয়াম থাকে যা কোষ ও টিস্যুগুলির কোনও ক্ষতি রোধ করতে সহায়তা করে।
ড্রাই ফ্রুটসের ভালো-মন্দে শুরুতেই জেনে নেই এর ভালো দিকগুলো:
মেটাবলিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে
সম্প্রতি এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, প্রতিদিন ড্রাই ফ্রুটস খেলে কার্ডিওমেটাবলিক হেলথ ভালো থাকে। মাত্রাতিরিক্ত ড্রাইফ্রুটস না খেলে আপনার পেটের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। ড্রাই ফ্রুটসে আখরোট, বাদাম, কিসমিস বা খেজুরের মতো উপাদান থাকে যা শরীরে অন্যান্য উপকারও করে। একাধিক রোগ থেকে মুক্তি দেয় ড্রাই ফ্রুটফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসে ভরপুর থাকে ড্রাই ফ্রুটস। যা প্রতিদিনের ডায়েটে থাকলে ডায়াবেটিস ও ওবেসিটির মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ড্রাই ফ্রুটস অন্ত্রের সমস্যা বা ক্যানসারের মতো রোগ থেকে দূরে রাখে। কিসমিস বা অ্যাপরিকটসে ফেনল থাকে, যা হার্ট ডিজিস, ব্রেন ডিজিসের মতো রোগ থেকে দূরে রাখে।
রক্তস্বল্পতা রোধে
প্রাকৃতিকভাবে ড্রাই ফ্রুটে চিনি থাকে। এছাড়া এতে আয়রন থাকে যা ড্রাই ফ্রুট অ্যানিমিয়া রোধ করে। শুকনো খেজুর সারা বছরই পাওয়া যায়। দিনে একটি খেজুর খেলে সারাদিন শক্তি পাওয়া যায়। প্রেগনেন্সির সময় ফেটাস তৈরি হতে সাহায্য করে ড্রাই ফ্রুটস।
চোখের স্বাস্থ্য ও হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে দূরে
ক্র্যানবেরিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যানথোসাইনিনস থাকে যা ক্র্যানবেরিকে গাঢ় লাল রং দেয়। এই উপাদান ক্যানসার ও ইনফ্লেমেটরি ডিজিস থেকে দূরে রাখে। নিউট্রিশন জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা বলছে ক্র্যানবেরির এই উপাদান ইউরিন ইনফেকশন দূর করতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি চোখ ও লিভার ভালো রাখে।
শরীরের গঠনে উপকারি
কয়েকটি সমীক্ষা বলছে, রোদে ফল শুকালে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস বেড়ে যায়। এজন্যই অনেক ড্রাই ফ্রুটসকে সুপার ফুডও বলা হয়ে থাকে। শারীরিক গঠনে সাহায্যকারী মাইক্রোনিউট্রিয়েনটস, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, মিনারেলসে ভরা থাকে ড্রাই ফ্রুটস। বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাই ড্রাই ফ্রুটস কতটা কার্যকরী তা সহজেই অনুমান করা যেতে পারে।
এতসব ভালো গুণে উৎসাহিত হয়ে মাত্রাতিরিক্ত ড্রাই ফ্রুটস খেতে যাবেন না। চলুন এবারে জেনে নেই এর মন্দ দিকগুলো:
ওজন বাড়ার শঙ্কা
শুকনো ফলের অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে আপনার ওজন বাড়িয়ে তুলতে পারে। আগেই বলেছি, ড্রাই ফ্রুটসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ি। ড্রাই ফ্রুটসয়ের ক্যালরি আর চিনির ঘনত্ব যেহেতু বেশি, তাই তা পরিমাণে অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়বে, পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেবে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। আপনি যদি প্রতিদিন শুকনো ফল খান তবে আপনি অল্প সময়ে স্থূল হয়ে উঠবেন।
পেট খারাপ হতে পারে
ফাইবার অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং পেট ভালো রাখতে সহায়তা করে। শরীরে পুষ্টির অভাব ড্রাই ফ্রুটের মাধ্যমে পূরণ করা গেলেও এগুলো খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। ড্রাই ফ্রুট পেটের পেটে বাধা, ফোলাভাব, পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। আবার সেগুলোতে যদি লবণ মেশানো বাদাম থাকে তাহলে বাড়বে রক্তচাপ, দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য।
দাঁতের ক্ষয়
শুকনো ফলের মধ্যে ফ্রুক্টোজ আপনাকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। তবে খুব বেশি শুকনো ফল খেলে আপনার দাঁতে সমস্যা হতে পারে। আসলে শুকনো ফলগুলিতে অতিরিক্ত চিনি থাকে, যা দাঁতে আটকে থাকে। এর ফলে দাঁতের ক্ষয় হয়।ড্রাই ফ্রুট খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা উচিত বা মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা উচিত।
চিনিতে আসক্তি
শুকনো ফলে উচ্চ পরিমাণে চিনির পরিমাণ থাকে। এর মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব বেশি। যা রক্তে শর্করার স্তরের ওঠানামার কারণ হয়ে থাকে। আর খেতে মজা বলে অনেকের চিনি বা মিষ্টির প্রতি আসক্তি বাড়ে।