রাজধানীর খেলার মাঠ ও পার্কের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

প্রকাশিত: ৫:৫৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর সব খেলার মাঠ ও পার্কের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব স্থানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে।

এছাড়া, আগামী ৬ মাসের মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াত-এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এ দেন। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী এবং অ্যাডভোকেট এস হাসানুল বান্না।

আদেশে হাইকোর্ট জনসাধারণের ব্যবহার্য পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ, অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণ, পার্ক ও খেলার মাঠ বিরুদ্ধ ব্যবহার, শ্রেণি পরিবর্তন এবং দখল সংবিধান ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হওয়ায় কেন তা বেআইনি, আইনি কর্তৃত্ববিহীন এবং আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন।

একইসঙ্গে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)-এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পার্ক ও খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। এছাড়া মহানগরীর পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ, শ্রেণি পরিবর্তন ও বিরুদ্ধ ব্যবহার রোধ এবং বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে পার্ক ও খেলার মাঠ পুনরুদ্ধারের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। মামলার বিবাদীদেরকে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।

মামলার বিবাদীরা হলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র; ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার; গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ।

উল্লেখ্য, ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার (৫৯০ বর্গমাইল) আয়তনবিশিষ্ট রাজধানী ঢাকা ১৬ মিলিয়ন লোকের আবাসভূমি। প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে খ্যাত এ মহানগরী বর্তমানে বিশ্বের বসবাস অযোগ্য নগরীর তালিকায় স্থান পেয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে দ্রুত প্রসারিত মেগাসিটিগুলোর মধ্যে বর্তমানে ঢাকা অন্যতম। অপরিকল্পিত নগরায়ন গ্রাস করছে এ নগরীর পার্ক ও খেলার মাঠের মতো নাগরিক সুবিধাদি।

নগর-পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধা বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। আয়তন বিবেচনায় দুই কর্পোরেশনে খেলার মাঠ দরকার অন্তত ৬১০টি, রয়েছে মাত্র ২৩৫টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১২৯টি ওয়ার্ড থাকলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) উল্লেখ রয়েছে যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। ফলশ্রুতিতে ঢাকার মোট জনসংখ্যার ২৭.৮২% তরুণ খেলার মাঠের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে পার্ক বা উদ্যান রয়েছে মাত্র ২৭টি। এর মধ্যে ৬টি পার্ক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে পার্ক রয়েছে মাত্র ২৩টি। বিদ্যমান এসব পার্ক ও খেলার মাঠের অধিকাংশেই নেই সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার। ফলশ্রুতিতে নাগরিকগণ বঞ্চিত হচ্ছে নির্মল বায়ু সেবন, ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অধিকার থেকে ও সর্বোপরি গাছপালা-প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ স্থাপনের জরুরি সুযোগ থেকে। ঢাকা শহরের সকল খেলার মাঠ ও পার্কসমূহ রক্ষায় বেলা উল্লেখিত মামলাটি করে।