সাইফুল ইসলাম :
রাজধানীতে একদিকে সমাবেশ চলছে, অন্যদিকে চলছে সংঘর্ষ। নয়া পল্টনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, প্রধান বিচারপতির বাসভবন এলাকা, পল্টন থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত সাংবাদিকসহ অন্তত ২২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক জন গুলিবিদ্ধ। পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে থেমে থেমে হচ্ছে সংঘর্ষ।
রাজধানীর কাকরাইল মোড় ও হাইকোর্ট এলাকা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে হামলা চালায় বিএনপির কর্মীরা। কাকরাইলে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল, জল কামান, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করছে পুলিশ। পুরো সেগুনবাগিচায় ছড়িয়ে পড়ছে টিয়ারগ্যাস। সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাসের ধোয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে গেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিক্ষিপ্তভাবে স্লোগান দিচ্ছেন।
শান্তিনগরে পুলিশ, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। শান্তিনগর পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দুপুরের পর মালিবাগ পুলিশ বক্সেও আগুন দেয় বিএনপি সমর্থকরা।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে জামায়াতে ইসলামীর ডাকে মহাসমাবেশ যোগ দিতে আসা দলটির নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। মতিঝিলের শাপলা চত্বর আসার পথে আরামবাগের গলিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে জামায়াতের নেতাকর্মীরা আরামবাগ মোড় জড়ো হতে থাকে। দুপুরে আরামবাগে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে জামায়াতের এক কর্মী আহত হয়।
বিজয় নগর এলাকা থেকে এস এম দেলোয়ার হোসেন জানান, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বিজয়নগর এলাকা। রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর এলাকায় আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট- পাথর ছুড়ছে। তারা বিজয়নগর প্রধান সড়ক ও বিভিন্ন গলি থেকে হামলা চালাচ্ছে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ও সাউন্ড বুলেট ছোড়ে। এই সংঘর্ষে দুই জন আহত হন। দুপুর পৌনে ৩টা পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল।
বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক সাদ্দিফ অভি জানান, বিজয়নগর এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। একটু পর পর টিয়ার শেল ছুড়ছে পুলিশ। একই সঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পল্টন মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে উৎসুক মানুষ এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের আটকে রেখেছে।
শাহবাগ থেকে শাহাদাৎ হোসেন জানান, শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ যাচ্ছে নেতাকর্মীরা। অপরদিকে মৎস ভবনের দিক থেকে বিচ্ছিন্নভাবে লোকজন সায়েন্স ল্যাবের দিকে যাচ্ছে। শাহবাগ মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।
মাতুয়াইল থেকে দেলোয়ার হোসেন বিশেষ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাতুয়াইল থেকে কাউকে জোটবদ্ধ হয়ে যেতে দিচ্ছে পুলিশ। পুরো এলাকায় পুলিশের গাড়ি টহল দিচ্ছে। পাড়া-মহল্লার ভেতরে বিএনপির নেতাকর্মীরা একজোট হওয়ার প্রাণপন চেষ্টা করছে। থমথমে পরিস্থিতিতে মূল সড়কে যানবাহন কম।
এদিকে সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সংর্ঘষের মধ্যে আহত হয়েছে কমপক্ষে তিন জন সাংবাদিক। বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক সালমান তারেক শাকিল ইটের আঘাতে আহত হন।
এদিকে আওয়মী লীগের সমাবেশে নিজেদের মধ্যেও মারামারি ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বেলা ২টার দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বক্তব্য দেওয়ার সময় এ বিশৃঙ্খলা হয়। এসময় হাতে থাকা স্ট্যাম্প এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের দিকে ছুড়ে মারতে দেখা যায়।
সমাবেশস্থলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে মঞ্চ থেকে শেখ ইনান সবাইকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান। তার পরও বিশৃঙ্খলা না থামলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সবাইকে শান্ত হওয়ার জন্য বললে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
রাজধানীর বিভিন্নস্থান থেকে এ পর্যন্ত পথচারী, সাংবাদিক ও আন্দোলনকারীসহ ২২ জন চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসেছেন। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। কেউ কেউ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঢামেক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।