মোঃ সাইফুল ইসলাম :
টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর বাইরে ৩৬ সদস্যের মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্য উচ্চশিক্ষিত। নির্বাচনী হলফনামায় নানা পেশা উল্লেখ করলেও বা তাদের আয়ের উৎস ভিন্ন থাকলেও বেশিরভাগ রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের। রাজনীতিনির্ভর উচ্চশিক্ষিত মন্ত্রিসভা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ী ২০ জন, আইনজীবী চারজন, চিকিৎসক দুইজন, শিক্ষক তিনজন, সাবেক আমলা দুইজন, বাহিনী তিনজন, কৃষক একজন ও বেসরকারি চাকুরে একজন রয়েছেন। যদিও এটি আয়ের উৎস প্রদর্শনে পেশা ব্যবহার করেছেন তারা। প্রকৃতপক্ষে এ মন্ত্রিসভার প্রায় ২০জন সদস্য সরাসরি রাজনীতি করেন। তাদের নিজস্ব ব্যাকগ্রাউন্ডে রাজনীতির সম্পৃক্ততা আছে। বাকি সাতজনের মতো পৈতৃক সূত্রে রাজনীতি করেন। এর বাইরে আটজনের কেউ সাবেক আমলা, কেউ অন্যান্য পেশা থেকে রাজনীতিতে এসেছেন।
মন্ত্রীরা কে কোন পেশার, শিক্ষাগত যোগ্যতা কী
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিএ পাস, পেশায় কৃষক। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএ অনার্স পাস, পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন বেসরকারি চাকরি ও লেখালেখি। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমএসএস করেছেন, পেশায় একজন আইনজীবী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিএসসি করেছেন, পেশায় ব্যবসায়ী। সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমবিবিএস ও এলএলএম করেছেন, তিনি পেশায় চিকিৎসক ও আইনজীবী দেখিয়েছেন হলফনামায়। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমবিএ করেছেন, পেশা ব্যবসা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান মাস্টার্স করেছেন, তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার, এখন তার পেশা রাজনীতি। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমএ ডিগ্রি নিয়েছেন, তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এলএলএম করেছেন, পেশায় আইনজীবী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ পিএইচডি করেছেন, পেশা শিক্ষকতা ও ব্যবসা। কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ পিএইচডি নিয়েছেন, পেশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বিএ পাস করেছেন, পেশা ব্যবসা ও কৃষি। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমএসএস করেছেন, পেশা কৃষি ও ব্যবসা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান এমএসএস করেছেন, পেশা ব্যবসা। ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমএ পাস, পেশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী। পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বিএ পাস, পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেছেন, তিনি পেশায় আইনজীবী। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমএ পাস, পেশা অধ্যাপনা, কৃষি ও ব্যবসা। ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এইচএসসি পাস, পেশা কৃষি ও ব্যবসা। রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম এমএ পাস, পেশা ব্যবসা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী স্নাতকোত্তর করেছেন, পেশা ব্যবসা। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এলএলবি পাস, পেশা আইন, ব্যবসা ও কৃষি। যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন এমবিএ করা, তিনি বেসরকারি চাকুরে দেখিয়েছেন হলফনামায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান স্নাতক ও পেশায় স্থপতি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন এমবিবিএস পাস, পেশায় চিকিৎসক।
প্রতিমন্ত্রীদের পেশা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা
নারী ও শিশু প্রতিমন্ত্রী বেগম সিমিন হোসেন (রিমি) এইচএসসি পাস, পেশায় ব্যবসায়ী। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ স্নাতক ও পেশায় ব্যবসায়ী। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমএসএস পাস, পেশায় আইনজীবী। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমবিএ করেছেন, পেশা অধ্যাপনা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান স্নাতকোত্তর পাস, পেশায় ব্যবসায়ী। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বি.কম পাস, পেশা কৃষি ও ব্যবসা। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক গ্রাজুয়েশন করেছেন, তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা স্নাতক, পেশায় ব্যবসায়ী। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম রুমানা আলী এমএ পাস, পেশা শিক্ষকতা। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এইচএসসি পাস, পেশায় ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) এমবিএ করেছেন, পেশায় ব্যবসায়ী।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১ আসন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে।
এর আগে বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে শপথ নেন নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। একই দিন সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। সেখানে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি দেন। এরপর বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ নেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।