আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের রাফা ক্রসিং বন্ধের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে মিসর। দেশটি বলছে, রাফা ক্রসিং বন্ধের জন্য একমাত্র ইসরায়েল দায়ী।
এর আগে গাজার লাইফ লাইন বলে পরিচিত এই ক্রসিং বন্ধের জন্য মিসরকে অভিযুক্ত করেছিল ইসরায়েল। বুধবার (১৫ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফা এলাকায় সামরিক অভিযানের মধ্যে দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় রাফা সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করার জন্য মঙ্গলবার ইসরায়েলকে দায়ী করেছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিরা যে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, তার জন্য একমাত্র ইসরায়েল দায়ী।’
এর আগে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার রাফা ক্রসিংয়ের মাধ্যমে গাজায় সাহায্য সরবরাহে বাধা দেওয়ার জন্য মিসরকে দায়ী করেন। এসময় রাফা ক্রসিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা সরবরাহ পুনরায় চালু করার আহ্বানও জানান তিনি।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শোকরি ইসরায়েলের ‘তথ্য বিকৃত করা এবং দায়িত্ব এড়ানোর’ নীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একইসঙ্গে শোকরি ‘রাফা ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশের ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ, টার্মিনালের আশপাশে সামরিক অভিযান এবং ত্রাণ কর্মী ও ট্রাক চালকদের সম্ভাব্য বিপদকে’ রাফা ক্রসিং দিয়ে সাহায্য সরবরাহে ব্যর্থতার প্রধান কারণ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি ‘গাজা উপত্যকায় নজিরবিহীন মানবিক সংকটের জন্য মিসরের ওপর দায়ভার চাপানোর জন্য ইসরায়েলের মরিয়া প্রচেষ্টার নিন্দাও করেছেন।’
এর আগে গত সপ্তাহে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরের একাংশ খালি করে দিতে সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি নির্দেশ দেয় ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর নির্দেশের পর রাফার পূর্বাঞ্চল থেকে বহু মানুষ সরে যেতে শুরু করেন।
পরে গাজার সঙ্গে মিসরের সীমান্তে অবস্থিত রাফা ক্রসিংয়ের দখল নেয় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। রাফা ক্রসিংয়ের একপাশে গাজা, অন্যপাশে মিসরের সিনাই উপদ্বীপ। ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর আগ পর্যন্ত এই সীমান্তপথটিকে গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘লাইফ লাইন’ বলে বিবেচনা করা হতো।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েল গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে।