র্যাব পরিচয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার ৭
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
সাইফুল ইসলাম:
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েতে ভুয়া র্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত র্যাবের ভূয়া জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ, ওয়ারলেস সেট, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল, মো. সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর, আবু ইউসুফ, দিদার ওরফে দিদার মুন্সী, মো. ফেরদৌস ওয়াহীদ, মো. আলামিন দুয়ারী ওরফে দিপু ও মো. দাউদ হোসেন মোল্যা। আজ রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গতকাল শনিবার (২১ অক্টোবর) গোপন সংবাদে ঢাকা মহানগরী ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে তাদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।
ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, গত ১০ অক্টোবর মাদার টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের কর্মকর্তা অনিমেষ চন্দ্র সাহা উত্তরার আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংকের শাখা থেকে তার কোম্পানির ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে প্রাইভেককারে করে বনানী যাচ্ছিলেন। কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে যাওয়ার সময় খিলক্ষেত থানার প্রাইম ডেন্টাল কলেজ বরাবর ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাত চক্রের সদস্যরা নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে কোম্পানির গাড়ি থামায়। গাড়িতে অবৈধ টাকা আছে উল্লেখ করে তারা গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। গাড়িতে থাকা কোম্পানির কর্মকর্তা অনিমেষ চন্দ্র সাহা, মো. শাহজাহান মিয়া ও ড্রাইভার আবুল বাশারকে হাতকড়া পরায়। এরপর ৪৮ লাখ টাকাসহ ওই গাড়িতে থাকা কোম্পানির তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্য একটি গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে তাদের অপহরণ করে পূর্বাচলে ৩০০ ফিট রাস্তায় নিয়ে যায়। ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ব্যাংক হতে উত্তলনকৃত টাকা, কোম্পানির একটি বøাঙ্ক চেক ও ৩টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় কোম্পানির সিইও সোহেল আহম্মেদ সুলতান খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা রুজু করেন।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলার তদন্ত কাজে সম্পৃক্ত হয় গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া র্যাব পরিচয় দেওয়া ডাকাত দলটিকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সবুজের নেতৃত্বে ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে (একজন আরেকজনকে চেনে না) ডাকাতি করে। অপারেশনের সময় তারা দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়। একটি দল বিভিন্ন ব্যাংকে অবস্থান করে এবং অন্য দলটি রাস্তায় অবস্থান করে। ব্যাংকে অবস্থানকারী ব্যক্তি টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে আর রাস্তায় অবস্থাকারী দলটিকে টাকা উত্তোলনকারীর তথ্য প্রদান করে। তখন রাস্তায় অবস্থানকারী দলটি টাকা উত্তোলকারীর পিছু নেয় এবং পথে ভিকটিমকে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে সর্বস্ব লুট করে নির্জন স্থানে ফেলে যায়। এরপর ডাকাতির সময় ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর প্লেট বদলে ফেলে এবং নিজেদের মোবাইল ফোন ভেঙ্গে পানিতে ফেলে দেয়। পরে নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে আত্মগোপন করে।
ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিকভাবে ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। চক্রটি ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছে, স্ত্রীর গহনা কিনেছে কেউবা জুয়া খেলেছে। ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, র্যাবের ভূয়া জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন, লুণ্ঠিত অর্থে ক্রয়কৃত স্বর্ণালংকার ও নগদ ২৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, তাদের নামে ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।