শিক্ষার্থীর সিম রেখে উপবৃত্তির টাকা তুলতেন মাদরাসার অধ্যক্ষ!
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার তালা ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার অধ্যক্ষ আবুল ফজল মো. নুরুল্লাহর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ সময় ধরে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ জানিয়ে আসছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা উপবৃত্তির টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও অধ্যক্ষ প্রতারণার মাধ্যমে তাদের উপবৃত্তির সিম নিজের কাছে রেখে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষা বোর্ড থেকে আলিম পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য ফেরত দেওয়া টাকা শিক্ষার্থীদের না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি এক শিক্ষার্থীকে অধ্যক্ষ ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এর আগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মচারীরা তালা ফাজিল মাদরাসার গভার্নিং বডির কাছে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তাকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দিয়ে ছিলেন মাদরাসা কমিটির তৎকালীন সভাপতি সরদার জাকির হোসেন।
এ ঘটনার সত্যতা পেয়ে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আবুল ফজল মো. নুরুল্লাহকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তবে, অধ্যক্ষ পুনরায় বহালের জন্য আবেদন করেছেন। অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আবুল ফজলের দাবি তার সাময়িক বহিষ্কার অবৈধভাবে করা হয়েছে। অধ্যক্ষের আবেদনে এ ঘটনায় আবারও তদন্ত শুরু হয়েছে।
মাদরাসার ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফাজিল বিভাগের শিক্ষার্থী আয়শা খাতুন বলেন, ফাজিল ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষার আগে পরীক্ষা না দিতে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে উপবৃত্তির সিমটি অধ্যক্ষ আবুল ফজল মো.নুরুল্লাহ হুজুর আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল। আমার সামনেও অনেকের কাছ থেকে সিম নিয়ে ছিলেন তিনি। যখন সিমটি দিতে অস্বীকার করি তখন আমাদের বলা হয় সিমটি না দিলে পরীক্ষার হলে কড়া গার্ড দেবে। তখন আমরা বলি, আমাদের ব্যক্তিগত সিম দিয়ে দিলে আমরা চলব কিভাবে? তখন তিনি আমাদের এই সিমটা বাদে নতুন একটা সিম তুলে দেন। তখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে নতুন সিম উঠিয়ে নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে উনার কাছে দিয়েছিলাম। আর থার্ড ইয়ারে উঠে সিমটি যখন ফেরত দিয়েছিল তখন ওই সিমে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি।
শিক্ষার্থী আরিফ খান বলেন, আমাকে তালা ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার অধ্যক্ষ আবুল ফজল মো. নুরুল্লাহ চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। চাকরি দেবে বলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলানো হয়েছে। রেজুলেশন দেখিয়ে ধাপে ধাপে টাকা নিয়েছে। কমিশনারের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ওসি বরাবরসহ মাদরাসা সভাপতি বরাবরও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সব জায়গা থেকেই আমার টাকা নেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে, তবে সে টাকা ফেরত দিতে রাজি হচ্ছে না।
অভিভাবক এনায়েত আলী খান বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের তদন্ত সঠিকভাবে হলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ন্যায্য দাবি আদায় হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড শিক্ষাক্ষেত্রে অশান্তি সৃষ্টি করছে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
যদিও এ বিষয়ে অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রথমে কল রিসিভ করে ব্যস্ততার কথা বলে ঘণ্টাখানিক পরে কল করতে বললেও তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি আর কল রিসিভ করেননি।
তালা ফাজিল মাদরাসার সাবেক সভাপতি সরদার জাকির হোসেন বলেন, আমি সভাপতি থাকাকালীন তাকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে কমিটিকে না জানিয়ে একজনের কাছ থেকে প্রিন্সিপাল সাহেব ৫ লাখ টাকা নিয়েছিল। যে কারণে তারা অভিযোগ করে। আমি প্রিন্সিপাল সাহেবের কাছে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। এছাড়া মাদরাসার কিছু অর্থ তসরুপ হওয়ার কারণে আমি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলাম।
তদন্ত কর্মকর্তা ও তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ ফিরোজ আহমেদ বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব না। প্রতিটি অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হবে।