শিশু ছাত্র আকাশকে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করেন নির্মাণ ভবনের ইঞ্জিনিয়ার-শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ২:০৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি নির্মাণাধীন স্কুলে প্রবেশ করে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশসহ তার কয়েকজন বন্ধু। এতে শ্রমিকরা তাদের ধাওয়া করলে আকাশের বন্ধুরা পালিয়ে যায়। আর আকাশকে ধরে নিয়ে যান তারা। এরপর নির্মাণাধীন ভবনটির ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেমের নির্দেশে লোহার রড চুরির অভিযোগে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় লাঠি, লোহার রড ও ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আকাশকে মারধর করেন শ্রমিকরা। পরদিন মারা যায় সে। এতে আকাশের ফুফু মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় ওই ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা হলেন- মো. মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে প্রান্ত (২৫), মো. ফিরোজ (১৮) ও মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৩৫)। এরমধ্যে ফিরোজ ও মোস্তাফিজুর আকাশকে নির্যাতন করেন বলে র‌্যাব জানায়। ফিরোজ পেশায় একজন শ্রমিক। আর মোস্তাফিজুর নির্মাণাধীন সাইটের ফোরম্যান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। গতকাল শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রে তিনি বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১০টায় আকাশ ও তার বন্ধুরা মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলের নির্মাণাধীন সাইটে প্রবেশ করে।

এসময় সাইটের শ্রমিকরা তাদের ধাওয়া করলে বন্ধুরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আকাশকে ধরে তাদের থাকার জায়গায় নিয়ে যান শ্রমিকরা। পরে গ্রেফতার মোয়াজ্জেমের নির্দেশে তাকে লোহার রড চুরির অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় হাত-পা বেঁধে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে লাঠি, রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। এতে আকাশের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
তিনি বলেন, পরদিন সকাল ৬টার দিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে শ্রমিকরা আকাশের ফুফুকে ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি জানায়। এরপর ফুফু ঘটনাস্থলে এসে আকাশকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। সকাল ৮টার দিকে মারা যায় আকাশ। মৃত্যুর সংবাদ শুনে গ্রেফতার এড়াতে ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকরা সাইট থেকে পালিয়ে মগবাজার ও রমনাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যান।
গ্রেফতারদের বিষয়ে খন্দকার মঈন বলেন, মোয়াজ্জেম উক্ত স্কুলের সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তার নির্দেশে আকাশকে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়। আর পুরো ঘটনা ভিডিও করে রাখেন তারা। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।