
সেলিনা আক্তার:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের মতো অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য ‘শুল্ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২৫’ চালু করেছে। এ লক্ষ্যে, রাজস্ব বোর্ড সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে, ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকি’ বলতে অপরাধ, অন্যান্য অবৈধ আর্থিক কার্যকলাপ, শুল্ক ও কর ফাঁকি এবং আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অর্থনৈতিক অপরাধ বোঝায়।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে একটি শুল্ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিশনারেট (সিআরএমসি) প্রতিষ্ঠা করা হবে। শুল্ক ঝুঁকি শনাক্ত ও শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য সিআরএমসি ঝুঁকি-সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করবে।
এটি ঝুঁকির প্রোফাইল তৈরি ও পরিচালনা করবে এবং অনলাইনে ঝুঁকি নিবন্ধন হালনাগাদ করবে। গোয়েন্দা তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও উন্নত উপাত্ত বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে লাল, হলুদ, নীল বা সবুজ ঝুঁকি-ভিত্তিক লেনে পণ্য চালান শ্রেণিবদ্ধ করবে।
সিআরএমসি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে ঝুঁকির প্রবণতা এবং প্রকৃতি নির্ধারণ ও বিশ্লেষণ করবে। অর্থনৈতিক অবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থা, আবগারী-শুল্ক হার, শুল্ক মূল্যায়ন, শুল্ক ছাড়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চুক্তি, বাজার ব্যবস্থা এবং শুল্ক বিভাগের দায়িত্ব ও কার্যাবলীকে প্রভাবিত করে এমন অন্যান্য দিক পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় জরিপ ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও শুল্ক নীতি প্রণয়নে পরামর্শ প্রদান করবে।
এটি সব শুল্ক স্টেশন ও বন্ড কমিশনারেটের জন্য দৈবচয়নের ভিত্তিতে চালান নির্বাচনের মানদণ্ড নির্ধারণ করবে এবং সময়ে সময়ে ওই মানদণ্ডগুলো আপডেট করবে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করবে, বোর্ডকে অবহিত করবে, প্রয়োজনীয় সমন্বয় করবে এবং মূল কর্মক্ষমতা সূচকগুলোর ক্ষেত্রে গৃহীত কার্যক্রমের ফলাফল পর্যালোচনা করবে।
সিআরএমসি যেকোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, আমদানি ও রপ্তানি সম্পর্কিত যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করবে এবং প্রয়োজনে তথ্য বিশ্লেষণে অন্যান্য সংস্থার সহায়তা নেবে।
সিআরএমসি গোপনীয় ও সংবেদনশীল তথ্য সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখবে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পূর্বানুমোদনক্রমে বোর্ডের পক্ষে কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিশনারেটের কার্যাবলী সম্পর্কিত যেকোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে।
এটি সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের জন্য ঝুঁকি সতর্কতা জারি করবে, ঝুঁকি ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করবে এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস বা কাস্টমস স্টেশন ভ্যাট কমিশনারেটকে সেগুলো সমাধানের জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেবে, ঝুঁকি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়মিত পর্যালোচনা করবে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সূচকগুলো আপডেট করবে।
এটি আন্তঃদেশীয় সীমান্ত বাণিজ্য সম্পর্কিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে নিয়মিত তথ্য বিনিময় করবে, যোগাযোগ রাখবে ও সমন্বয় করবে, বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে ও বোর্ডের কাছে উপস্থাপন করবে এবং সময়ে সময়ে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবে।
যথাযথ শুল্ক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে, কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিশনারেট স্বয়ংক্রিয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (এআরএমএস) অথবা একটি উপযুক্ত স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক সিস্টেম ব্যবহার করে পণ্যসম্ভার, যাত্রী, এজেন্ট ও ব্যাংক সম্পর্কিত ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে নির্বাচন করার বিষয়টি নির্ধারণ করবে।
কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিশনারেট কাস্টমস কম্পিউটার সিস্টেম থেকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করবে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে থেকে বা গোপন তথ্যদাতাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত যেকোনো তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রয়োজনে অকুস্থলে যাচাই করা হবে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
সিআরএমসি বিশ্ব শুল্ক সংস্থার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মডেল বা আন্তর্জাতিক সেরা অনুশীলন বা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত যেকোনো ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মডেল অনুসরণ ও ব্যবহার করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী একটি ঝুঁকি নিবন্ধন ও ঝুঁকি মূল্যায়ন ডাটাবেজ গড়ে তুলতে পারে।
সিআরএমসি ঝুঁকি নির্ধারণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করার জন্য, কাস্টমস কম্পিউটার সিস্টেম বা এআরএমএস অথবা বাছাই করার ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং এর ভিত্তিতে গৃহীত ঝুঁকি প্রশমন ব্যবস্থার ফলাফল শনাক্ত করতে সক্ষম যেকোনো সিস্টেমে সংরক্ষিত উপাত্ত থেকে একটি বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে